ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেষ মুহূর্তে আশার সমাধি বাংলাদেশের, শিরোপা ভারতের

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১ অক্টোবর ২০১৬

শেষ মুহূর্তে আশার সমাধি বাংলাদেশের, শিরোপা ভারতের

রুমেল খান ॥ মাত্র তিন সেকেন্ডের জন্য হলো স্বপ্নভঙ্গ। হলো আশার সলিল সমাধি। আর সেটা ঘটালো বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৮ জাতীয় হকি দল। শুক্রবার মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে ‘বেক্সিমকো অনুর্ধ-১৮ এশিয়া কাপ হকি’র চতুর্থ আসরে তারা প্রথমবারের মতো পারেনি শিরোপাটা নিজের করে নিতে। তাদের ৫-৪ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ২০০১ সালে মালয়েশিয়াতে অনুষ্ঠিত প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। একই ভেন্যুতে সকালে ও দুপুরে অনুষ্ঠিত স্থান নির্ধারণী খেলায় পাকিস্তান চাইনিজ তাইপেকে ১৮-০ গোলে হারিয়ে তৃতীয় এবং ওমানকে ২-১ গোলে হারিয়ে পঞ্চম স্থান লাভ করে চীন। খেলা শেষ হতে আর মাত্র তিন সেকেন্ড বাকি। সময়টুকু পার করা গেলেই পেনাল্টি শূট আউটের পরীক্ষা (টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের খেলা ড্র হলে খেলা আর গড়াবে না অতিরিক্ত সময়ে)। কিন্তু খেলা শেষ হবার তিন সেকেন্ড আগেই গোল হজম করে বাংলাদেশ। পুড়ে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায়। এই আসরের গ্রুপ পর্বের খেলাতেও একই ব্যবধানে বাংলাদেশ হারিয়েছিল ভারতকে। খেলায় দু’-দু’বার এগিয়ে গিয়ে এবং খেলা শেষ হবার মাত্র তিন সেকেন্ড আগে গোল খেয়ে বাংলাদেশের এই হার নিঃসন্দেহে হতাশাজনক। খেলা শেষে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা অশ্রুজলে কেঁদে ভাসান বুক। ১টি করে গোল করেন বাংলাদেশের রোমান সরকার, মোহাম্মদ মোহসীন, আশরাফুল ইসলাম এবং মাহবুব হোসেন। ভারতের হয়ে ১টি করে গোল করেন শিভম আনন্দ, হারদিক সিং, দিলপ্রিত সিং, কজেংবাম সিং এবং অভিষেক। বাংলাদেশের আশরাফুল ইসলাম লাভ করেছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার (১১ গোল)। বাংলাদেশের অধিনায়ক রোমান সরকার পান টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। ভারতের পঙ্কজ কুমার পান আসরের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার। ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান ভারতের কনজেংবাম সিং। হকি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি শফিউল্লাহ আল মুনীর বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বোনাস উপহার ঘোষণা করেন। দলের খেলোয়াড়দের নৈপুণ্য নিয়ে খুশি বাংলাদেশ কোচ কাওসার আলী, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের। বাজে দিন গেল। তবে সেমিফাইনাল লক্ষ্য নিয়ে শুরু করেছিলাম, শেষ হলো রুপালি ট্রফি দিয়ে। ছেলেরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।’ অধিনায়ক রোমান সরকার বলেন, ‘শেষ মুহূর্তের গোলে হেরে যাওয়ায় খুব খারাপ লাগছে। তারপরও বলব টুর্নামেন্টে আমাদের প্রাপ্তি কিন্তু কম নয়। অনেক কিছু শিখেছি এখান থেকে। যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এখানে ভাল খেলেই শেষ না, আমাদের আরও অনেকদূর যেতে হবে। খেলোয়াড়দের নিয়মিত মাঠে রাখা নিশ্চিত করতে হবে।’ রোমান আরও যোগ করেন, ‘অনভিজ্ঞতাও একটা ভূমিকা রেখেছে আমাদের হারে। আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশি খেলি না, যদি আরও বেশি ম্যাচ খেলতে পারতাম তবে আজ যে অবস্থা হয়েছে, তা সামাল দেয়ার জন্য কিছুটা হলেও মানসিক প্রস্তুতি থাকতো।’ ভারতীয় দলের অধিনায়ক নীলম সন্দ্বীপ বলেন, ‘বাংলাদেশ ভাল দল, সমান তালে খেলেছে। তবে মনোসংযোগ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি তারা। আর আমাদের লক্ষ্য ছিল ৭০ মিনিটেই খেলা শেষ করার।’ বাংলাদেশের পিসি স্পেশালিস্ট আশরাফুল বলেন, ‘সর্বোচ্চ গোলদাতা না হয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি পেলে অনেক বেশি খুশি হতাম। দেশের হকির ঘুরে দাঁড়াতে এটা জরুরী ছিল। আত্মবিশ্বাস ও জেদ ছিল চ্যাম্পিয়ন হব, দুর্ভাগ্য, পারিনি!’ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন হারের পর মনোবল ভাঙ্গা খেলোয়াড়দের চাঙ্গা করতে বলেন, ‘তোমরা দারুণ খেলেছ। টুর্নামেন্টে আমাদের লক্ষ্য ছিল সেমিফাইনাল। কিন্তু তোমরা দলকে ফাইনালে নিয়ে এসেছ। আরেকটু হলেও তো আমরা জিতেই যেতাম। ভারতের চেয়ে কোন অংশে খারাপ খেলনি তোমরা। ভারত যত সুযোগ-সুবিধা পায়, তোমরা তার অর্ধেকও পাও না। চিন্তা করো না। আমরা তোমাদের পাশে আছি। যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা লাগে আমরা তোমাদের দেব।’ এদিকে শিরোপা জিতে ভীষণ আনন্দিত ভারতীয় কোচ বিজে কারিয়াপ্পা, ‘বাংলাদেশ ভাল খেলেছে, তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে করেই হোক আমরাই শিরোপা জিতব। খেলোয়াড়রা ভয় পায়নি কখনই, তারা তাদের লক্ষ্যে ছিল অবিচল।
×