ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বয়ংক্রিয় মেশিনে পাটের ছাল ছাড়ানো সম্ভব

কষ্টের দিন শেষ- স্বল্প ব্যয়ে উন্নতমানের সোনালি আঁশ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কষ্টের দিন শেষ- স্বল্প ব্যয়ে উন্নতমানের সোনালি আঁশ

আব্দুর রউফ সরকার ॥ ক্রমাগত লোকসানের কারণে সোনালি আঁশখ্যাত পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন উত্তরাঞ্চলের কৃষক। পণ্যের মোড়কে পাটের বহুমুখী ব্যবহার সরকারীভাবে বাধ্যতামূলক করায় ইদানীং পাটের চাহিদা বেড়েছে। ফলে মৌসুমের শুরুতে গত বারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে এখন সব ধরনের পাট বিক্রি হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে পাটের চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় পুনরায় পাট চাষে ঝুঁকে পড়ছেন তাঁরা। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিয়েছে কাঁচাপাট পচানো নিয়ে, যাকে স্থানীয় ভাষায় জাগ দেয়া বলে। জাগ দেয়ার জন্য প্রয়োজন পুকুর, বিল বা জলাশয়। বর্তমানে পুকুরগুলোতে মাছ চাষ হচ্ছে। বিল বা জলাশয়গুলোতে পর্যাপ্ত পানি থাকে না। তাছাড়া সেখানেও নানা ফসলের চাষ হচ্ছে। বাধ্য হয়ে স্বল্প পানিতে কম জায়গায় বেশি পরিমাণ পাট জাগ দেয়া হচ্ছে। এতে পাটের আঁশের রং সোনালি না হয়ে অনেকটা কালচে হচ্ছে। এ কারণে সেই পাট নিম্নমানের বলে বিবেচিত হচ্ছে। ফলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জাগ দিতে না পারায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এমনি এক সঙ্কট থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে কৃষকের দিকে এগিয়ে এসেছে রংপুরের একটি রফতানিমুখী হস্ত ও কুটির শিল্প উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কারুপণ্য লিমিটেড। তারা পাট চাষীদের উন্নতমানের পদ্ধতিতে ‘অটোমেটিক মেশিনে পাটের ছাল ছাড়ানো এবং জাগ দেয়ার জন্য কারিগরি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। নিজস্ব উদ্যোগে বিদেশ থেকে মেশিন আমদানি করে কৃষকদের হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করছে তারা। নিজস্ব অর্থায়নে কৃষক সমাবেশসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে তারা ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে। এজন্য কৃষকদের কাছ থেকে কোন অর্থ নেয়া হচ্ছে না। এ পদ্ধতি ব্যবহার করার কারণে স্বল্প খরচে উন্নত মানের আঁশ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে পাট চাষীদের মাঝে আধুনিক পদ্ধতিতে পাট জাগ দেয়া ও পাট চাষের আগ্রহ বাড়ছে। ‘কারুপণ্য’ তাদের অটোমেটিক মেশিনে ছাল ছড়ানো ও উন্নতমানের পাট জাগ দেয়ার নতুন পদ্ধতি কর্মসূচীর আওতায় রংপুর জেলার সদর উপজেলার লাহিড়ীর হাট বৈকণ্ঠপুর, শাহবাজপুর, মোমিনপুর ও চন্দনপাট গ্রামের কৃষকদের নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে এই কার্যক্রম শুরু করেছে। এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ‘পাওয়ার ড্রাইভেন জুট ফাইবার এক্সট্রাকশান মেশিন’ এই মেশিন চীন থেকে আমদানি করে কৃষকদের হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এই কাজের জন্য কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে ‘প্রাক্টিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ’ নামের একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা। কারুপণ্যের নিজস্ব কর্মী বাহিনী কৃষকের জমিতে ও বাড়িতে গিয়ে বিনামূল্যে হাতে-কলমে শিক্ষা দিচ্ছে। এতে কৃষকরা বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানতে পেরে উৎসাহিত হচ্ছে। রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ খোন্দকার মেসবাহুল ইসলাম বলেন, পানি সঙ্কট পাট চাষীদের জন্য একটি বড় সমস্যা। পানির অভাবে স্বল্প জায়গায় পচা ও নোংরা পানিতে পাট জাগ দেয়ার ফলে পাটের রং ভাল হয় না। ফলে চাষী ভাল দাম পায় না। তাই ‘অটোমেটিক মেশিনে পাটের ছাল ছাড়ানো এবং জাগ দেয়ার আধুনিক পদ্ধতি কৃষকের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনবে। এটি চালু হলে আগামীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দিগুণ পাট চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। ‘প্রাক্টিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ’ এর কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর চৌধুরী জানান, এখন পানি সঙ্কটের কারণে পাট চাষীরা পাট কাটার পর জাগ স্বল্প পরিসরে পানিতে পাট জাগ দেয়ার কারণে পাটের মান ক্রমাগত নষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন জলাশয়ের পানিও দূষিত হয়ে পড়ে। পাটের মান ভাল না হওয়ায় কৃষক পাটের দাম পাচ্ছে না। এখন এই নতুন পদ্ধতিতে পাট ছাড়ানোর পর স্বল্প পরিসরে পানির চৌচ্চার মধ্যে পাট জাগ দিলে পাটের মান ভাল হয় এবং সামান্য জায়গায় অনেক পাটের জাগ দেয়া যায়। পানির দূষণ কমানো যায়। এজন্য তাদের দেয়া সহজবোধ্য কারিগরি সহায়তাই কৃষকের জন্য যথেষ্ট কার্যকর হচ্ছে। ফলে পাটের মান হলে কৃষক পাটের বাজার মূল্য বেশি পেলে পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে। মান ভাল না হওয়ায় পাটের বাজার কম থাকার কারণে পাট চাষ কমে গেছে। এ অবস্থায় ‘অটোমেটিক মেশিনে ছাল ছড়ানো ও উন্নতমানের পাট জাগ দেয়ার নতুন পদ্ধতি’ কৃষককে আবারও পাট চাষে আগ্রহ বাড়াতে সহায়তা করছে।
×