ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রনাথ ॥ নৌকাডুবি

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১১ আগস্ট ২০১৬

চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রনাথ ॥ নৌকাডুবি

কবিতা, গান, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ, চিত্রকলা ইত্যাদি সকল সৃষ্টিকে এগিয়ে নিয়ে যিনি বিশ্ব দরবারে স্থান করে দিয়েছেন তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের ৩৪ বছর পর চলচ্চিত্রের উদ্ভাবন হয়। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথের নোবেল বিজয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সবার দৃষ্টি কাড়ে বাংলা সাহিত্য।১৯২০-২১ সালে রবীন্দ্রনাথ ৫ম বার বিদেশে ভ্রমণের সময় হলিউডের সাড়াজাগানো দম্পতি মেরি পিকফোর্ড ও ডগলাস ফ্লেয়ার বাংকস এর সঙ্গে ইংল্যান্ড-এ বেড়াতে যান। ১৯২৯ সালে পরিচালক মধু বসু রবীন্দ্রনাথের ‘মানভঞ্জন’ গল্পকে গিরিবালা নামে চলচ্চিত্রায়নের জন্য চিত্রনাট্য নির্মাণ করেন।১৯৩০ সালে চিত্রনাট্যটির চিত্ররূপ মুক্তি পায় বর্তমানের এলিট সিনেমায়।পশ্চিমা দেশে যখন চলচ্চিত্রকে শিল্প মাধ্যম হিসাবে পূর্ণতা দেয়ার চেষ্টা চলছিল, তখন রবীন্দ্রনাথও চলচ্চিত্র নিয়ে গভীরভাবে ভাবতেন। ১৯২০ সালে ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম রবীন্দ্রনাথের বিসর্জন গল্পের চলচ্চিত্রায়ন করার উদ্যোগ নিলেও ১৯২৩ সালে নরেশচন্দ্র মিত্রের পরিচালনায় বাংলা চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রথম চিত্ররূপ মানভঞ্জন। এরপর ১৯২৮ সালে শিশির ভাদুড়ি বিসর্জন ও বিচারক নামের দুটি ছবি করেন। ১৯২৯ সালে ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় তপতী ছবিটি নির্মাণ শুরু করলেও চার রিল পর্যন্ত শূটিং হয়। বিশ্বকবি নিজে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য রাজি হলেও বিদেশ ভ্রমণের কারণে ছবির কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়।১৯৩২ সালে সবাক চলচ্চিত্র নটীর পূজা ও চিরকুমার সভা মুক্তি পায়। ১৯৩০ সালে কবির বিদেশ ভ্রমণের কারণে ছবিটি ৩ রীল শূটিংয়ের পর অসমাপ্ত অবস্থায় থেকে যায়। ওই সময় কবি জার্মানিতে অবস্থানকালে মিউনিখ শহরের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ইউ এফ এ কোম্পানি তাকে চলচ্চিত্রের উপযোগী একটি মৌলিক চিত্রনাট্য লিখতে বলে। তখন ‘দি চাইল্ড’ নামে প্রথম মৌলিক চিত্রনাট্য চলচ্চিত্রায়নের জন্য লেখেন।কবিগুরু নিজেই তৈরি করেন ‘নটীর পূজা’ ছবি।মাত্র চার দিনে ছবির শূটিং শেষ হয়। শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীদের অভিনীত এ চলচ্চিত্রে উপালির চরিত্রে অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং। এরপর নরেশ মিত্রের নির্বাক ছবি নৌকাডুবি (১৯৩৮), সবাক ছবি গোরা (১৯৩৮), সেতু সেনের চোখের বালি (১৯৩৮) নির্মিত হয়। ১৯৩৮ সালে দুই বিখ্যাত কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিসংবলিত কাহিনী, গান ও সুরে মুখর ছিল চলচ্চিত্রজগৎ।তপন সিংহ পরিচালিত কাবুলীওয়ালা ভারতের রাষ্ট্রপতির পদক, বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার ও ক্ষুধিত পাষাণ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। ১৯৬১ সালে চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় রবীন্দ্রনাথের তিনটি ছোটগল্প সমাপ্তি, পোস্টমাস্টার ও মনিহারা নিয়ে নির্মাণ করেন তিনকন্যা ছবিটি।সেগুলোর মধ্যে পার্থপ্রতিম চৌধুরীর ‘শুভা ও দেবতার গ্রাস’ (১৯৬৪) অরুন্ধুতী দেবীর ‘মেঘ ও রৌদ্র (১৯৬৯), মৃণাল সেনের ইচ্ছাপূরণ’ (১৯৭০), অজয় করের ‘মাল্যদান (১৯৭০), ‘নৌকাডুবি’ (১৯৭৪), স্বদেশ সরকারের ‘শাস্তি’ (১৯৭০), বীরেশ্বর বসুর ‘বিসর্জন’ (১৯৭৪) এবং স্বদেশ সরকারের পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘দিদি’-ই ছিল উল্লেখ করার মতো। ১৯৫৬ থেকে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ২০৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ও উর্দু ছবি নির্মিত হলেও এর মধ্যে সালাউদ্দিন পরিচালিত ১৯৬৩ সালে ধারাপাত ছবিতে একটি ও ১৯৭০ সালে জহির রায়হান পরিচালিত জীবন থেকে নেয়া ছবিতে রবীন্দ্রনাথের একটি গান ব্যবহার করা হয়। ১৯৬৯ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত শবনম, রহমান অভিনীত জোয়ার ভাটা ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’ গানটি ব্যবহার করা হয় । ১৯৭২ সালে চাষী নজরুল ইসলাম স্বাধীনতাযুদ্ধের ওপর নির্মিত প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন ছবিতে রবীন্দ্রনাথের ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ গানটি ব্যবহার করেন। আজিজ আজহার পরিচালিত ১৯৭৪ সালে নির্মিত চোখের জলে ছবিতে ও রবীন্দ্রনাথের গান ব্যবহার করা হয়। ১৯৮৪ সালে কাজল আরেফিন পরিচালিত সুরুজ মিয়া ছবিতে অজিত রায়ের কণ্ঠে একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত, ১৯৮৫ সালে শেখ নিয়ামত আলীর দহন ছবিতে কাদেরী কিবরিয়া, ১৯৯৪ সালে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আগুনের পরশমণি ও ২০০৮ সালে আমার আছে জল ছবিতে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যবহার করা হয়। সত্তর দশকের শেষের দিকে সাইফুল আজম কাসেম নৌকাডুবি উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে নির্মাণ করেন সোহাগ ছবি অবশ্য এ ছবিতে কাহিনীকার হিসেবে রবীন্দ্রনাথকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। পশ্চিম পাকিস্তানের এসএম ইউসুফের পরিচালনায় নাইয়ার সুলতানা, কামাল ও শামীম আরা অভিনীত উর্দুতে নির্মিত হয় নৌকাডুবি। ১৯৮৪ সালে পরিচালক কাজী হায়াৎ ক্ষুধিত পাষাণ অবলম্বনে রাজবাড়ী ছবিটি নির্মাণ করলেও ছবির টাইটেলে কাহিনীকার হিসেবে রবীন্দ্রনাথের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। চাষী নজরুল ইসলাম ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন শাস্তি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বণে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘শাস্তি’।চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেন মমতাজ উদদীন আহমদ এবং পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। এতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিয়াজ, পূর্ণিমা, ইলিয়াস কাঞ্চন, চম্পাসহ আরও অনেকে। একই বছর তিনি নির্মাণ করেন রবীন্দ্রনাথের গল্প অবলম্বনে শুভা। রবীন্দ্রসাহিত্যের সফল চলচ্চিত্রায়ন শাস্তি ও শুভা দর্শকদের প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়। রবীন্দ্রনাথের এক চিরঞ্জীব গল্প ‘সুভাষিনী’
×