ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেসব কারণে ঐতিহাসিক হবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন

প্রকাশিত: ১৯:১২, ৩০ জুলাই ২০১৬

যেসব কারণে ঐতিহাসিক হবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন

অনলাইন ডেস্ক ॥ ডেমোক্রেট পার্টির কনভেনশনে হিলারি ক্লিনটনের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে আগামী চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা হওয়ার দৌঁড়ে কে কে থাকছেন তা নিশ্চিত হয়েছে। রিপাবলিকান পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। হিলারি-ট্রাম্পের যে-ই এই নির্বাচনে জয়ী হন কেন তা ঐতিহাসিক হবে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কীভাবে তা ঐতিহাসিক হবে তার বিবরণও দেওয়া হয়েছে। গোধূলি লগ্নের বছরগুলো ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বারাক ওবামা যখন হোয়াইট হাউজের সামনের দরজা দিয়ে হেঁটে যান, তখন তার বয়স ছিল ৪৭ বছর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে বয়সের বিচারে তিনি ছিলেন পঞ্চম কনিষ্ঠ। সবচেয়ে কম বয়সে প্রেসিডেন্ট হন থিওডর রুজভেল্ট, ৪২ বছর ৩২২ দিনে। তবে এবারের নির্বাচনের ফল যা-ই হোক না কেন ওবামার উত্তরসূরি কিছুটা বয়স্কই হবেন। গত ১৪ জুন ৭০তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন ট্রাম্প। নভেম্বরে নির্বাচিত হলে তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট। এর আগে সবচেয়ে বেশি বয়স ৬৯ বছরে হোয়াইট হাউজে যান রোনাল্ড রিগান। ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনও ৬৯ বছর পূর্ণ করবেন নির্বাচনের সপ্তাহ দুয়েক আগে এবং নির্বাচিত হলে তিনি হবেন সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্টদের মধ্যে দ্বিতীয়। উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন, যিনি ১৮৪১ সালে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তার জায়গা দখল করবেন তিনি। নিউ ইয়র্ক ১৯৪৪ সালের পর এই প্রথম নিউ ইয়র্কের দুই বাসিন্দার মধ্যে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন নিউ ইয়র্কের তৎকালীন গভর্নর থমাস ই ডিউয়ি। এবার হিলারি-ট্রাম্পের যে-ই জেতেন আগামী বছর শপথ নেওয়ার সময় ৭১ বছর পর নিউ ইয়র্কের কোনো বাসিন্দা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন তিনি। (শিকাগোতে হিলারির জন্ম হলেও নিউ ইয়র্ক থেকে সিনেটর ছিলেন তিনি এবং এই স্টেটেই তার বাস।) অর্থ ট্রাম্প ভোটে জিতলে কিছু দিনের জন্য সবচেয়ে কম টাকা খরচে কোনো জয়ী প্রার্থীকে দেখা যেতে পারে। ফেডারেল ইলেকশন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ জুলাই পর্যন্ত ট্রাম্প মাত্র নয় কোটি ১০ লাখ ডলার ব্যয় করেছেন, যার পাঁচ কোটি ডলার তার নিজের। ২০০০ সালে আল গোরের পরে কোনো প্রার্থী এত কম খরচ করেননি। এই সময়ে হিলারি ক্লিনটন প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন। এখন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের চেকবই ভাঙতে হলেও তা বারাক ওবামার গতবারের মোট ব্যয় প্রায় ৫৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের চেয়ে বেশ কম হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অভিজ্ঞতা ট্রাম্পের বিজয় আরেক দিক দিয়ে উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠবে, গত ৬০ বছরেরও বেশি সময়ে গভর্নর বা কংগ্রেসের অভিজ্ঞতার বাইরে কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। এমনকি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাবিহীন সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনআওয়ার ১৯৫৩ সালে দায়িত্ব নেওয়ার আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার ছিলেন। ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ছিলেন না। তার আগে হার্বার্ট হুভার, ১৯২৯ থেকে ১৯৩৩ সাল মেয়াদে প্রেসিডেন্ট, আগে ছিলেন প্রকৌশলী ও সমাজকর্মী। এর আগে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ক্যাসিনো ও হোটেলের মালিক ছিলেন না। তবে ট্রাম্প বলছেন, তার অভিজ্ঞতা কাজে দিচ্ছে এবং ওয়াশিংটনের ক্ষমতাকেন্দ্রের সঙ্গে তার ততোটা সম্পৃক্ততা না থাকাটাই তার জন্য ভালো হয়েছে। নারী প্রেসিডেন্ট? সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনের বেশ কয়েক বছর ওয়াশিংটনে থাকার দৃশ্য একটি বিষয় সহজে ভুলিয়ে দিতে পারে: নির্বাচিত হলে তিনি হবেন প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কোনো দলের মনোনয়ন পেয়ে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। এর আগে তার কাছাকাছি হিসেবে পাওয়া গিয়েছিল ২০০৮ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জন ম্যাককেইন অনেকটা চমক দিয়ে আলাস্কার গভর্নর সারাহ পেলিনকে তার রানিং মেট ঘোষণার মধ্য দিয়ে। তার আগে ১৯৮৪ সালে ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ওয়াল্টার মন্ডেল তার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে জেরালডিন ফেরারের নাম ঘোষণা করেছিলেন। তবে তাদের দুজনই পরাজিত হন। ডেমোক্রেটদের ইতিহাসের হাতছানি বিস্ময়করভাবে এখন পর্যন্ত মাত্র দুজন ডেমোক্রেট সরাসরি আরেক ডেমোক্রেটের উত্তরসূরি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। সর্বশেষ ১৮৫৭ সালে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন জেমস বুচানান। হ্যারি ট্রুম্যান ও লিন্ডন জনসন- দুজনই ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন; প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর পর এই পদে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী নির্বাচনে দুজনই বিজয়ী হন। সেক্ষেত্রে হিলারি ক্লিনটনের বিজয় ডেমোক্রেট পার্টির জন্য অনেক বড় অর্জন হয়ে দেখা দেবে।
×