ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চার মাসে বাঁধের ওপর একশ’ কোটি টাকার সবজি

খুলনায় ঘেরকেন্দ্রিক সবজি চাষে বিপ্লব

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৫ জুলাই ২০১৬

খুলনায় ঘেরকেন্দ্রিক  সবজি চাষে বিপ্লব

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনায় ঘেরকেন্দ্রিক সবজি চাষে বিপ্লব ঘটেছে। ঘেরের পানিতে গলদা চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ চাষ করা হচ্ছে। ঘেরের বাঁধের (আইল) ওপর মৌসুম অনুযায়ী চাষাবাদ করা হচ্ছে সবজি। চলতি খরিপ- ১ মৌসুমে (বৈশাখ থেকে শ্রাবণ) খুলনায় ঘেরের বাঁধে তিন সহস্রাধিক হেক্টর জমিতে শসা, করলা, ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন প্রকারের শাক-সবজি চাষ করা হয়েছে। শুধুমাত্র খরিপ-১ মৌসুমে ঘেরের বাঁধে বা আইলে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে প্রায় তিনশ’ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। খুলনার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, রূপসা, তেরখাদাসহ বিভিন্ন উপজেলায় সমতল ভূমিতে বহুকাল আগে থেকেই ব্যাপকহারে শাক-সবজি চাষ করা হয়। ঘেরে গলদা চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ চাষ শুরুর পর বিগত কয়েকবছর ধরে ঘেরের বাঁধে সবজি আবাদ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার খুলনা জেলার তেরখাদা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, রূপসাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ঘেরের পাড়ে খরিপ-১ মৌসুমে তিন সহস্রাধিক হেক্টর জমিতে সবজির চাষ আবাদ করা হয়েছে। আবাদকৃত সবজির মধ্যে রয়েছে শসা, করলা, লাউ, ঢেঁড়স, পুঁইশাক প্রভৃতি। এবার সবজির উৎপাদন ভাল হচ্ছে। ঘেরের বাঁধে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে প্রায় ১শ’ কোটি টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার প্রায় ১০ হাজার চাষী এই সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত। আর ঘেরের পাড়ে কমপক্ষে ১০ কাঠা এবং কোন চাষীর ৫ বিঘা থেকে ১০ বিঘা পর্যন্ত সবজির ক্ষেত রয়েছে। জানা গেছে, খুলনা বিভিন্ন উপজেলায় মধ্যে তেরখাদা ও রূপসা উপজেলার ঘেরের পাড়ে ব্যাপকভাবে শসা চাষ করা হয়। চলতি মৌসুমে রূপসা উপজেলায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে টিএসবি ইউনিয়নে ১৬ হেক্টর, ঘাটভোগে ২০ হেক্টর, আইচগাতীতে ২ হেক্টর, শ্রীফলতলায় ২ হেক্টর এবং নৈহাটিতে ১০ হেক্টর জমিতে শসা চাষ করা হয়। এই এলাকায় গত বছরের তুলনায় এবার শসার ফলন খুব ভাল হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন এই উপজেলা থেকে গড়ে প্রায় তিন লাখ টাকার শসা বিক্রি হচ্ছে। তেরখাদা উপজেলার আজগড়া গ্রামের চিংড়ি চাষী স্থানীয় ইউপি সদস্য অপূর্ব কুমার মল্লিক জানান, তিনি পাঁচ বিঘা জমির ঘেরের পাড়ে শসার চাষ করেছেন। বীজ, সার, কীটনাশক আর জমির চারপাশে বাঁশ ও নেট জালের ঘেরা দিতে প্রতি বিঘায় ১২-১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিছুটা বিলম্বে আবাদ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এখন পরিচর্যা চলছে। আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ক্ষেত থেকে শসা তোলা শুরু হবে। তবে ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে তিনি সংশয়ে রয়েছেন। গত বছর ভাল দাম পেয়েছিলেন বলে তিনি জানান। ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া গ্রামের অনাদি ম-ল ২ বিঘা জমির ঘেরের পাড়ে খরিপ-১ মৌসুমে (বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস) শসা, লাউ, ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ১০-১১ হাজার টাকা। উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। বর্ষাকালীন সবজির পাশাপাশি আগাম শীতকালীন সবজি চাষও শুরু করেছেন তিনি।
×