ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন

সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে ফায়দা লুটতে চায় বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৬ জুন ২০১৬

সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে ফায়দা লুটতে চায় বিএনপি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতার সংখ্যা বৃদ্ধি করে অনেকে সরকারকে বিব্রত করার কৌশল হিসেবে নিচ্ছে বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির মতে, বিএনপি-জামায়াত জোটের বিগত তিন বছরের নৈরাজ্যমূলক সহিংস কর্মকা-ের ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কিছু বিচ্ছিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি শুধুমাত্র সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। রবিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকম-লীর বৈঠক শেষে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তার মতে, বিএনপি ইউপি নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করলে এ ধরনের সহিংস ঘটনা কমে যেত। কিন্তু তারা শুরু থেকেই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পথ বেছে নিয়েছে। হানিফ বলেন, যেসব স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মনোনয়ন পাননি, সেসব স্থানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ওপর ভর করে বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও সামাজিক দ্বন্দ্ব^কে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতাকে নির্বাচনী সহিংসতা হিসেবে চালিয়ে দিয়ে সরকারকে ও নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছে দলটি। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সহিংসতা কিন্তু জিয়াউর রহমানসহ অনেকের সময়ই হয়েছে। এগুলো পারিবারিক, ব্যক্তিগতসহ বিভিন্ন কারণে সংঘটিত হয়েছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তারপরও এসব মৃত্যু নির্বাচনী সহিংসতায় জড়িয়ে ফেলে সংখ্যাবৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে দেশের ৭৬ দশমিক ৮৭ ভাগ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ৩০ হাজারের বেশি কেন্দ্রের মধ্যে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে নির্বাচন কমিশন ৩৪৬টি ভোট কেন্দ্র বন্ধ করেছে, যা দশমিক শূন্য ৫ শতাংশের নিচে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন ও সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করেছে। ইউপি নির্বাচনে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে স্বীকার করে তিনি বলেন, এই সহিংসতার ঘটনাগুলো বিএনপির ধারাবাহিক ষড়ন্ত্রের ফসল। কারণ বিএনপি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিন বছর সরকার উৎখাতের নামে যে ধরনের নৈরাজ্য করেছে, এগুলোর প্রতিফলনেই ইউপি নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন সহিংসতা হয়েছে। নির্বাচনী কাজে সহযোগিতা করায় নির্বাচন কমিশনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনার দায় সরকারের ওপর চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করলে এই ধরনের ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাবে। তাই সব রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আর ইউপি নির্বাচনের সহিংসতা নিয়ে বিএনপির কথা বলার কোন নৈতিক অধিকার নেই বলেও দাবি করেন তিনি। চট্টগ্রামে পুলিশ সুপারের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে গুলি করে হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, এ হত্যাকা-ও কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি সুপরিকল্পিত হত্যাকা-। দেশকে অস্থিতিশীল ও সরকার উৎখাত করতে যারা দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতা চালাচ্ছে, এটি তাদের কর্মকা-ের একটি অংশ বলে আমরা মনে করি। আশাকরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতিদ্রুত তদন্ত করে এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে। সেই সঙ্গে এর আগে যেসব গুপ্তহত্যা হয়েছে, সেসবের হত্যাকারীদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস কেউ না পায়। ‘গণতন্ত্র সঙ্কুচিত হওয়ায় দেশে গুপ্তহত্যা বাড়ছে’- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে হানিফ বলেন, এই কথার মাধ্যমে প্রকারন্তরে কী ফখরুল সাহেব হত্যার দায় স্বীকার করে নিচ্ছেন? তাহলে কি তারা তাদের কর্মসূচী পালন করতে পারছেন না বলে এ ধরনের হত্যাকা- ঘটিয়ে প্রমাণ করতে চাচ্ছেন দেশে গণতন্ত্র নেই? তিনি বলেন, যেদেশে বিএনপি-জামায়াতের মতো দল সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের মদদ দেয়, সেদেশে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে একটু সময় লাগতেই পারে। আশা করছি, সব হত্যাকারীকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে পারব। বিদ্রোহী প্রার্থীদের শাস্তির বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি সুনির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র অনুসারে পরিচালিত হয়। ইতোমধ্যে যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রত্যেককেই বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ে ত্রুটি ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ দল। এক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ৪ থেকে ৫ জন করে প্রার্থী ছিল। কিন্তু আমরা মনোনয়ন দিয়েছি একজনকে। তাই ব্যক্তিগত আবেগ ধরে রাখতে না পেরে অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন। প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে হানিফ ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, ডাঃ বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, সুজিত রায় নন্দী, এস এম কামাল হোসেন, একেএম এনামুল হক শামীম প্রমুখ।
×