ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘বাংলাদেশ, আই লাভ ইউ’

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৫ জুন ২০১৬

‘বাংলাদেশ, আই লাভ ইউ’

সেরা ক্রীড়াবিদ হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে মোহাম্মদ আলীর অভিমানী, জেদি, ক্ষ্যাপাটে ও উদার ব্যক্তিত্বের পরিচয়ধারী ছোট ছোট গল্প। সেই গল্পগুলোই তুলে ধরছে বাংলানিউজ। জন্মেছিলেন ক্যাসিয়াস ক্লে হয়ে। ১৯৬৪ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তিনি নিজের নাম রাখেন মোহাম্মদ আলী। শৈশবে বক্সার সুগার রয় রবিনসনকে আইডল হিসেবে মানতেন ক্যাসিয়াস। সে সময় তিনি একটি আয়োজনে রবিনসনকে কাছে পেয়ে একটি অটোগ্রাফ আবদার করেন। কিন্তু অনেকটা রাগান্বিত স্বরে রবিনসন বলেছিলেনÑ ‘অটোগ্রাফ দেয়ার মতো সময় আমার নেই।’ এ কথাটি ক্ষুদে ক্যাসিয়াসের মনে অনেক দাগ কেটেছিল। তারপর থেকে তিনি বেঁচে থাকা অবধি অটোগ্রাফ দেয়ার ব্যাপারে কাউকে নিরাশ করেননি। আইডলের অটোগ্রাফ না পাওয়ার কষ্টের কথা তার চেয়ে বেশি আর কে বুঝতো? মোহাম্মদ আলী তার ভক্তদের চিঠির মাধ্যমে অটোগ্রাফ দেয়ার জন্য আলাদা পোস্ট অফিসের ঠিকানাও দিয়েছিলেন। একবার বিংশ শতাব্দীর ‘রক এ্যান্ড রোল’ মিউজিকের রাজা খ্যাত এলভিস প্রেসলি উপহার হিসেবে মোহাম্মদ আলীকে একটি পোশাক দেন। ওই পোশাকটির পেছনে লেখা ছিলÑ ‘দ্য পিপলস চ্যাম্পিয়ন’। আলীও ওই পোশাকটি গায়ে জড়িয়ে পরবর্তী একটি মুষ্টিযুদ্ধে অংশ নেন। কিন্তু সেখানে হেরে বসেন তিনি। তারপর আর ভুল করেও সেই পোশাক গায়ে জড়াননি আলী। তিনি মনে করতেন, পোশাকটি তার জন্য দুর্ভাগ্যের প্রতীক। ঘটনাটি ১৯৬০ সালের। তখন রোমে অলিম্পিক চলছে। সেখানে তিনি ‘লাইট হেভিওয়েট’ প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জেতেন। এরপর দেশে ফেরেন আলী। এর মধ্যে কোন কারণে তাকে একটি নৈশভোজের অনুষ্ঠান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানস্থল থেকেই আলী চলে যান অহিও নদীর কাছে। রাগে-দুঃখে তিনি তার অতি প্রিয় পদকটি ছুড়ে ফেলে দেন নদীতে। তিনি সে সময় বলতে থাকেন, যে দেশের মানুষরা তাকে পছন্দ করেন না, সে দেশে পদক পরে কী লাভ? পদকটি আলীর অনেক প্রিয় ছিল। ছুড়ে ফেলার আগ পর্যন্ত পদকটি সব সময় গলায় পরে থাকতেন আলী। ১৯৬৩ সালে তখন তার বয়স ২১। তিনি নিজ কণ্ঠে বেন ই’র ‘স্ট্যান্ড বাই মি’ নামে গানটি গান। সে গান এ্যালবাম আকারে প্রকাশ হয় ১৯৬৪ সালে। গানটি জনপ্রিয়তার দিক থেকে চার্টের ১০২ নম্বরে চলে আসে। একই বছর তিনি ‘আই এ্যাম দ্য গ্রেটেস্ট’ শিরোনামে গানের এ্যালবাম বের করেন। ওই গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে সে সময়। পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার কারণে ১৯৬৪ সালে আলী সৈনিক জীবনে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন। তবে দুই বছর পর ১৯৬৬ সালে ঠিকই তিনি যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে। কিন্তু এর পরের বছর ১৯৬৭ সালে ভিয়েতনামের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে সেখানে যেতে অস্বীকৃতি জানান আলী। যুদ্ধের বিরোধিতায় তার এ সিদ্ধান্তে আলীর বক্সিংয়ের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। সঙ্গে হয় পাঁচ বছরের জেল এবং সে সময়কার ১০ হাজার ডলার জরিমানাও। তিন বছর পর মুক্ত হন তিনি। আবার ফিরে পান তার বক্সিংয়ের লাইসেন্স। ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এসেছিলেন বিশ্বখ্যাত এই মানুষটি। সে সময় তাকে সচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার মানুষের। সংক্ষিপ্ত ওই সফরে এসেই আলী নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসা। বলে গিয়েছিলেনÑ ‘বাংলাদেশ, আই লাভ ইউ’।
×