ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল ফোন শিল্পে প্রধান বাধা শুল্ক বৈষম্য

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৮ মে ২০১৬

মোবাইল ফোন শিল্পে প্রধান বাধা শুল্ক বৈষম্য

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের বাজার বছরে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকার। পুরোটাই আমদানি নির্ভর। প্রায় সবটাই আসে চীন থেকে। সম্পূর্ণ (সিবিইউ বা কমপ্লিট বিল্ড আপ) মোবাইল ফোন আদমানিতে ভ্যাট, কাস্টমস, এআইটিসহ শুল্ক দিতে হয় ২৩.৭৫ শতাংশ। কিন্তু দেশে মোবাইল ফোন তৈরি করলে কাঁচামাল এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক দিতে হয় সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশ। সব কাঁচামাল এবং যন্ত্রাংশের গড় শুল্ক দাঁড়ায় ৩৭ থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ সম্পূর্ণ তৈরি মোবাইল ফোন আমদানির তুলনায় কাঁচামাল এবং যন্ত্রাংশ আমদানি করলে শুল্ক দিতে হয় প্রায় দ্বিগুণ। এজন্য বাংলাদেশে কেউ মোবাইল ফোন তৈরি করে বিপুল ক্ষতির ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। অথচ দেশেই তৈরি হতে পারে উচ্চ প্রযুক্তির মোবাইল ফোন সেট। তাতে একদিকে যেমন বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে মোবাইল ফোন রফতানিও সম্ভব। সেইসঙ্গে এ খাতে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক অনেক ব্যাকওয়ার্ড শিল্পও গড়ে উঠবে। জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩ কোটিরও বেশি মোবাইল সেট ব্যবহৃত হয়। এরমধ্যে ৬ কোটির মতো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আমদানি করা নিম্নমানের মোবাইল সেট কিনে প্রায়ই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। অথচ দেশেই তৈরি হতে পারে উন্নতমানের মোবাইল সেট। সূত্র বলছে, মোবাইল ফোন তৈরি করতে প্রায় ৯০টি কাঁচামাল প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে যার বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বর্তমান কর কাঠামোতে মোবাইল ফোন তৈরির প্রয়োজনীয় মৌলিক কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক দিতে হয় সর্বনিম্নœ ৩১.৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে ব্যাটারি আমদানিতে ৫৩.৩৫ শতাংশ, পিসিবি (প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড) বা মাদারবোর্ডে ৩১.৫০ শতাংশ, এলসিডি ডিভাইসে ৩১.৫ শতাংশ, ইয়ারফোনের ওপর ৫৩.৩৫ শতাংশ এবং স্ক্র ভয়েড স্টিকার আমদানিতে প্রায় ৯৫ শতাংশ কর দিতে হয়। সম্প্রতি ডাক, টেলিযোগাযোগও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদনপত্র দিয়েছে প্রস্তাবিত কম্পিউটার এ্যান্ড মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের আবেদনে এই শিল্পের অনকূলে এসআরও (স্ট্যাচুটরি রেগুলেটরি অর্ডার) জারির মাধ্যমে দশ বছরের জন্য শুল্ক রেয়াত চাওয়া হয়েছে। দাবি করা হয়েছে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ব্যবহৃত মৌলিক কাঁচামাল এবং যেসব যন্ত্রাংশ প্রাথমিকভাবে দেশে উৎপাদন সম্ভব নয় তার ওপর আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যাহতি প্রদানের। সেইসঙ্গে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরোপনীয় মূল্য সংযোজন প্রত্যাহারের দাবিও তুলে ধরা হয়েছে। এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ফাহিম রশিদ জানান, কয়েকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোন তৈরির চিন্তা ভাবনা করছে। তাদের কেউ কেউ অবকাঠামো নির্মাণ এমনকি কিছু মেশিনারিজ স্থাপনও করেছেন। বর্তমানে ডিজাইন এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ হচ্ছে দেশেই। পূর্ণাঙ্গ কারখানার জন্য তারা এখন সরকারের নীতি সহায়তার প্রত্যাশায়। জানা গেছে, সরকার ইতোপূর্বে প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারি করে কম্পিউটার, মডেম, সফটওয়্যার, মনিটর ইত্যাদি আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর রহিত করেছে।
×