ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওয়াশিংটন পোস্ট

দর্শকরাই যেখানে ভিডিও গেম বদলে দিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ৭ মে ২০১৬

দর্শকরাই যেখানে ভিডিও গেম বদলে দিচ্ছে

ফিরাক্সিস গেমস উদ্ভাবিত এলিয়েন বিষয়বস্তু নিয়ে যুদ্ধ কৌশলভিত্তিক ভিডিও গেম ‘এক্সকম ২’-এর পিছনে যে ডিজাইন টিমটি কাজ করেছিল সম্প্রতি সেই টিমটি এমন কিছু করেছে যা বেশিরভাগ মানুষকে বিস্মিত করতে পারে। সৃজনশীল পরিচালক জেক সলোমনের নেতৃত্বে ডিজাইনার দলটি একসময় লক্ষ্য করেন যে গেমটি মুক্তি পাওয়ার পর ফ্যানরা বা ভক্তরা নিজেরাই সিরিজের আগের টাইটেলগুলোর পরিবর্তন সাধন করছে। সেটা দেখে ডিজাইনার দলটি শুধু যে ঐ ধারাটিকে সাদরে গ্রহণ করল তাই নয় উপরন্তু তারা ব্যাপারটিকে উৎসাহিত করার জন্য প্রকৃতপক্ষে গোড়া থেকে গেমের কোড নতুন করে নির্ধারণেরও সিদ্ধান্ত নিল। প্রথমে করা হলো ২২ বছরের এক ফ্রাঞ্চাইজির জন্য। ফ্যানরা তাতে অনুকূল সাড়া দিল। এক হাজারেরও বেশি ফ্যান এই গেমে তাদের নিজস্ব পরিবর্তনগুলো প্রকাশ করেছে। পরিবর্তনগুলোর মধ্যে আছে একজন ফ্যান গেমটিকে এমনভাবে রিডিজাইন করেছে যে এই গেমে পাত্রপাত্রীগুলোর মধ্যেকার সম্পর্ক যেভাবে কাজ করে তা সম্পূর্ণ বদলে যায়। এছাড়াও আছে এমন জনপ্রিয় ডিজাইন যাতে আপনি নিজের বন্দুকটা করজিতে রূপান্তরিত করতে পারেন। এ ধরনের ক্রিয়াকলাপে সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা গেমে থাকবে এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। একে বলা হয় মডিং। কিন্তু সলোমন এই মডিংয়ের ব্যাপারটাকে এমন একটা উপায় হিসেবে দেখেন যাতে করে তাঁর ভিডিও গেমের আয়ুষ্কাল বাড়ানো যায় এবং ফ্যানদের সঙ্গে উন্নততর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি বলেন, মডস হচ্ছে গেমের উদ্ভাবক এবং দর্শকের মধ্যে একটা চিত্তাকর্ষক মধ্যভূমি। এটা গেমকে তরতাজা রাখে এবং দর্শকদের কিছু একটা নিয়ে কথা বলার সুযোগ দেয়। অন্যদিকে গেমের উদ্ভাবকরা গেমের নতুন বিষয়বস্তু তৈরি করার পিছনে সময় ব্যয় করে। এক্সকম-২ এর প্রকাশক হলো টেক-টু ইন্টারএ্যাকটিভ। এটি একদল স্বাধীন গেম উদ্ভাবককে ‘গ্র্যান্ড থেফট অটো ভি’র জন্য মাল্টিপ্লেয়ার মডের ওপর কাজ করা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছে তাদের কাছে এমন কোড আছে যার দ্বারা পাইরেসির পথ সুগম হতে পারে। অন্য মডগুলো বিশেষ করে মাল্টিপ্লেয়ার মড সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কারণ এগুলো থাকলে গোষ্ঠীর বিশেষ কতিপয় সদস্য প্রতারিত করার সুযোগ পায়। তবে সামগ্রিকভাবে খেলোয়াড় ও স্টুডিও নির্বিশেষে এই মডগুলোকে সাদরে গ্রহণ করছে। এমনকি ফিরাক্সিস তার গেমকে মডবান্ধব করে তোলার আগেও প্লেয়াররা গেমের টাইটেল তাৎপর্যভাবে বদলানোর উপায় সন্ধান করছিল। বিশেষভাবে পরিচিত একটি মডের নাম হলো ‘দি লং ওয়ার’। এটি ‘এক্স কম : এনিমি আননোন’ এবং ‘এক্সকম : এনিমি উইদইন’ এই উভয় ভিডিও গেমকে উল্লেখযোগ্যরূপে সম্প্রসারিত, পুনির্বিন্যস্ত ও পুনঃভারসাম্য বিধান। সলোমন একদা আইজিএনকে এমনও বলেছিলেন যে লং ওয়ারের জন্য তার ডিজাইনার দল মূলত ২০ ঘণ্টার টিউটোরিয়াল করেছিল। মডটা এই গেমে এক ভিন্ন অনুভূতি এনে দেয় এবং স্বল্পসংখ্যক দর্শকের ওপর মূল দৃষ্টি নিবন্ধ করে যা বাণিজ্যিক টাইটেলের পক্ষে সম্ভবত করার সাধ্য হতো না। সলোমন বলেন, ‘ওরা কিভাবে সেটা করেছিল আমি এখনও জানি না। ওরা সেখানে গেল এবং কোডের অনেক কিছু নতুন করে লিখল এবং এমন কিছু বানাল যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শকের কাছে সত্যিই উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। মডগুলোকে এই গেমের পিছনে তার দলের প্রদত্ত শ্রমের সমালোচনা হিসেবে না দেখে সলোমন একে কোম্পানির বিপুলসংখ্যক ভক্তের ভালবাসার শ্রম হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, আর যাই হোক না কেন, কাউকে না কাউকে বিনা পারিশ্রমিকে প্রচুর কাজ করতে হয়। মালিকানাস্বত্বের সঙ্গে যুক্ত একটি দল হিসেবে তারা যা কিছু কাজ করেছে যথা কোড, আর্ট এ্যাসেট, সাউন্ড ইত্যাদি সবকিছু জনসাধারণের হাতে তুলে দেয়া বিচক্ষণতার পরিচায়ক হবে কিনা তা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে সম্ভাব্য নেতিবাচক যা কিছু থাক না কেন সেগুলোকে ছাড়িয়ে ইতিবাচক দিকগুলোরই প্রাধান্য থাকবে। যেখানে মডের ব্যাপারটা যুক্ত সেখানে মালিকানার প্রশ্নটা তেমন কোন ইস্যু নয়। দর্শকদের সৃজনশীলতার জন্যই ভিডিও গেমটি আর গেম হিসেবে থাকেনি। এর উত্তরণ ঘটেছে গেম থেকে প্লাটফর্মে। তাছাড়া সলোমন বলেন যে তার নিজ দলের ওপর তার যথেষ্ট আস্থা আছে যার জন্য তিনি জানেন যে তারা যে মূল ভিডিও গেমটি বাজারে ছেড়েছেন দর্শকরা তাতে যতরকম পরিবর্তনই আনুক না কেন, গেমটি তার আপন গুণেই টিকে থাকতে পারবে।
×