ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা জিয়ার প্রতি প্রধানমন্ত্রী

জয়ের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে জবাব দিন, মিথ্যা প্রমাণ করুন

প্রকাশিত: ০৮:১১, ৬ মে ২০১৬

জয়ের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে জবাব দিন, মিথ্যা প্রমাণ করুন

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা তাঁর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দেয়া চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ক্ষমতায় থাকতে গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়ে এখন আমার ছেলেকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বিএনপি নেত্রী জয় সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছেন। বিএনপি নেত্রীকে বলব- জয় (সজীব ওয়াজেদ জয়) আপনাকে যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে তা গ্রহণ করে তার জবাব দিন, মিথ্যা তথ্য প্রমাণ করুন। আমি আমার ছেলে-মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলেছি, আপনার ছেলেদের মতো দুর্নীতিবাজ, অর্থপাচারকারী চোর-চোট্টা বানাইনি। দেশের সেবা করতে শিখিয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশকে আমরা অভিশাপমুক্ত করছি। জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসী-জঙ্গীবাদীদের এ দেশে ঠাঁই হবে না। অনেকেই চেষ্টা করবে এ দেশে জঙ্গীবাদ আছে বলে নতুন খেলা শুরু করতে। কিন্তু আমি অন্তত বেঁচে থাকতে এসব খেলা সফল হতে দেব না। গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি মানুষের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনাদের ছেলে-সন্তানসহ কেউ যাতে কোন জঙ্গী বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত না হয় সেদিকে সজাগ ও সতর্ক থাকবেন। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। বাংলাদেশের মাটিকে কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসীকে ব্যবহার করতে দেব না। বাড়িভাড়া দেয়ার আগেও সতর্ক থাকবেন, কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসী যেন ঢুকতে না পারে। কোন কিছু তথ্য পেলেই পুলিশকে খবর দিন। এ ব্যাপারে তিনি দেশবাসীর সহযোগিতাও কামনা করেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দশম জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সমাপনী বক্তব্যে অংশ নেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ। সমাপনী বক্তব্য শেষে স্পীকার অধিবেশন সমাপ্তি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর দীর্ঘ ভাষণে বিএনপির এক সমাবেশে সজীব ওয়াজেদ জয়ের এ্যাকাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার রয়েছে মর্মে খালেদা জিয়ার মিথ্যা তথ্যের কঠোর সমালোচনা করেন। সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি নেত্রী এতিমের টাকা পর্যন্ত মেরে খেয়েছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় বক্তৃতা দিতে পারেন, সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিতে পারেন, কিন্তু আদালতে হাজিরার সময় অসুস্থ হন! আসলে চোরের মন পুলিশ পুলিশ। উনি অপরাধ করেছেন, আর তাই আত্মবিশ্বাস নেই বলেই বিএনপি নেত্রী মামলা লড়তে ভয় পান। যদি তাঁর মাঝে সততা থাকত, আত্মবিশ্বাস থাকত- তাহলে কোর্ট থেকে এভাবে পালিয়ে বেড়াতেন না। এ প্রসঙ্গে বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক আমলে তাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়েরের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমি কোন অন্যায় করিনি। তাই শত বাধা উপেক্ষা করে আমি মিথ্যা মামলাগুলো মোকাবেলা করতে পেরেছি। কারণ মিথ্যাকে আমি কখনও মেনে নেইনি, কখনও নেবও না। ন্যায় ও সত্যের পথে থেকেছি বলেই সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে পেরেছি। তিনি বলেন, যারা অন্যায় করবে তাদের বিচার হবেই। যে আমার নিজ দলের হলেও কাউকে ক্ষমা করছি না, সবার বিচার করছি। অতীতে জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ারা সবাই বঙ্গবন্ধুর খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দিয়েছে। আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, রায় কার্যকরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অভিশাপমুক্ত করছি। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমনে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, এখানে সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই। একজন মুসলমান হয়ে আরেকজন মুসলমানকে যারা হত্যা করে তারা কখনও বেহেস্তে যেতে পারবে না, তাদের ঠাঁই হবে দোজখে। আল্লাহ কাউকে হত্যার লাইসেন্স দেয়নি। খালেদা জিয়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নিজেরা মানি লন্ডারিং, ঘুষ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তারা কত টাকা চুরি করেছে, কত টাকা ঘুষ খেয়েছে, কত টাকা তারা মানি লন্ডারিং করে বিদেশে রেখেছে-এই প্রশ্নটা দেশবাসীর। কারণ যখন আমরা দেখি আমেরিকায় এফবিআই অফিসারকে ঘুষ দিয়ে কিনে ফেলেছে। এরা এফবিআইয়ের অফিসারকে ঘুষ দিয়ে কিনে ফেলতে পারে সেই পরিমাণ অর্থ বিএনপি নেতাদের কাছে আছে এবং এটা আমেরিকাতেই ধরা পড়েছে। এছাড়াও আমেরিকা সরকার এবং এফবিআইয়েই এই মামলা করেছে যেখানে বিএনপি নেতার নামও এসেছে। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ সংসদে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্কিন ও সিঙ্গাপুরের আদালতে বিএনপি নেত্রীর দুই ছেলের অর্থ পাচারের ঘটনা প্রমাণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী থাকতে খালেদা জিয়া নিজে কালো টাকা সাদা করেছেন। বিদেশে পুত্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করিয়েছেন। সিমেন্সসহ বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ-দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি হত্যা মামলা থেকে আসামি রেহাই দিতে টাকা ঘুষ খেয়েছে বিএনপি নেত্রীর ছেলে। বিএনপি নেত্রী এতিমের টাকা আত্মসাত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের প্রোফাইল তৈরি করে। সেখানে বিএনপি নেত্রীর বড় ছেলের নাম উঠেছে। বিশ্বসভার শীর্ষ অর্থ পাচারকারীদের তালিকাতেও বিএনপি নেত্রীর ছেলের নাম রয়েছে। দেশের ইতিহাসে আমরাই প্রথম বিএনপি নেত্রীর ছেলেদের পাচারকৃত কিছু অর্থ দেশে ফেরত এনেছি। তিনি বলেন, বিএনপি আমলে বাংলাদেশ বারংবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমরা সেই কলঙ্ক থেকে দেশকে উদ্ধার করেছি, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল। বিরোধী দলের নেতা যা বলেন ॥ সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ হাইকোর্টের রায় প্রসঙ্গে বলেন, আইনমন্ত্রী বললেন রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করবেন। কিন্তু কার কাছে আপীল করবেন? আপীল তো সেই বিচারপতিদের কাছেই করতে হবে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা সংসদ সদস্য হয়েছি। সংসদের সঙ্গে সবার সম্মান জড়িত। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নেই বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিরোধী দল হিসেবে আমরা সরকারের নেতিবাচক কর্মকা-ের সমালোচনার পাশাপাশি ভাল কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আমরা সংসদে গালিগালাজ, বয়কট করতাম, তখনই কী বিরোধী দল বলা হবে? এই মানসিকতা বদলাতে হবে। দেশ ও জনগণের জন্য আমরা কাজ করে যেতে চাই। পর্দা নামল দশম অধিবেশনের ॥ দশম জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশন বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে চলতি বছরের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটল। আগামী জুন মাসের শুরুতেই বসবে একাদশ তথা বাজেট অধিবেশন। দশম অধিবেশন শুরু হয় গত ২৪ এপ্রিল। এই অধিবেশনে মোট ৯ কার্যদিবসে মোট ১৪টি বিল পাস হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার ও এমপিদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিলও পাস হয়েছে।
×