ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াসা বলছে দুর্গন্ধযুক্ত হলেও এই পানি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়

পানি সঙ্কটে রাজধানীবাসী কোন কোন এলাকার পানিতে ময়লা দুর্গন্ধ

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২০ এপ্রিল ২০১৬

পানি সঙ্কটে রাজধানীবাসী কোন কোন এলাকার পানিতে ময়লা দুর্গন্ধ

ফিরোজ মান্না ॥ পানির সঙ্কট চরমে উঠেছে। ঢাকা মহানগরের অনেক এলাকায় এ অবস্থা বিরাজ করছে। কোন কোন এলাকায় ময়লা আর দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এই পানি ব্যবহার করে নগরবাসী নানা রকম পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার কোন কোন এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রায় বন্ধই রয়েছে। ওই সব এলাকায় গাড়ি দিয়ে পানি সরবরাহ দেয়ার কথা থাকলেও ওয়াসা তা করছে না। ব্যক্তিগতভাবে পানি কিনে নিতে হচ্ছে। প্রতি গাড়ি পানির দাম ৬শ’ টাকা। কিন্তু গাড়ি প্রতি ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওয়াসা বলছে, শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গার পানি কল-কারখানার বর্জ্যে অতিমাত্রায় দূষিত এবং দুর্গন্ধযুক্ত। এই পানি শোধন করতে বেশি পরিমাণ কেমিক্যাল ব্যবহার করেও পানির দুর্গন্ধ দূর করা যাচ্ছে না। তবে পানি ভাল। এই পানি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর না। যেসব এলাকায় পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ কম হচ্ছে সেসব এলাকায় গাড়ি দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। গত ৭ দিন ধরে মগবাজারের একটি অংশ, পেয়ারাবাগ, আম বাগান, গাবতলা, মধুবাগ, হাজীপাড়া, শাহজাহানপুর, উত্তর শাহজাহানপুর, বাড্ডা, খিলগাঁও, তালতলা, মিরপুর এলাকার মানুষ পানি সরবরাহ পাচ্ছেন না বলেই চলে। পানি সরবরাহ খুবই কম বলে প্রতিদিনই অভিযোগ আসছে। ওয়াসা চলতি শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই পানি সঙ্কট যাতে না হয় সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু তাদের নেয়া ব্যবস্থা কোন কাজে আসছে না। অনেক এলাকায় পানি সঙ্কট দেখা দিলেও ওয়াসার গাড়ি দিয়ে পানি সরবরাহ করতে পারছে না। ওয়াসার পানি নিতে এক-দুইদিন আগে সিরিয়াল দিতে হচ্ছে। এরপর পানি পেলেও গাড়ি প্রতি টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। পানি পেলেও তাতে দুর্গন্ধ ও ময়লায় ভরা। ওয়াসার পানি দৈনন্দিন কাজেও ব্যবহার করা কঠিন হয়ে গেছে। পানির এমন অবস্থা নিয়ে কথা বলার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন, নদীর পানি ভাল না তাই ওয়াসার পানিও ভাল নেই। বৃষ্টি হলে ওয়াসার পানি ভাল হয়ে যাবে। পানি সরবরাহ কেন কম এমন প্রশ্নে এড়িয়ে তারা জানিয়েছেন, বিয়ষটি এমডি ডিএমডির কাছ থেকে জানাই ভাল। কারণ তারা শুষ্ক মৌসুম আসার আগে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পানির উৎপাদন চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি। শুষ্ক মৌসুমে পানির কোন অভাব হবে না। এখন কেন পানির অভাব দেখা দিল। প্রতিদিন পানি নিয়ে কাড়াকাড়ি হচ্ছে। গাড়ির সিরিয়াল লেগেই আছে। গাড়িতে পানি সরবরাহ দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা জানি পানির কি তীব্র সঙ্কট চলছে। পানি সরবরাহের বিষয় নিয়ে ওয়াসার এমডি তাকসিন এ খানের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, পানির কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তীব্র গরম আর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পানির এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই পানির সমস্যা থাকবে না। যেসব এলাকায় পানির বেশি সমস্যা ওই সব এলাকায় নদী থেকে পানি এনে শোধন করে সরবরাহ দেয়া হয়। নদীতে পানি হলেই সরবরাহও বাড়বে। বর্তমানে ঢাকাবাসীর দৈনিক পানির চাহিদা ২২৫ কোটি লিটার। ওয়াসা ২৪২ কোটি লিটার পানি উৎপাদনে সক্ষম। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশ পানি আসে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। এখন তা কমিয়ে ৭৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে এখন চাহিদার ২২ শতাংশ পানির যোগান পাওয়া যাচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে যে পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে ওই পানিতে কিছুটা গন্ধ আসছে। কারণ শীতালক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গার পানির দূষণের মাত্রা এত বেশি যে ওই পানি শোধন করতে অনেক বেশি কেমিক্যাল দিতে হচ্ছে। পানিতে গন্ধ থাকলেও পানির মান ভাল আছে। ময়লা ও ঘোলা পানি যেসব এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে ওই সব এলাকায় ডিপটিউবওয়েল থেকে পানি সরবরাহ দেয়া হয়। এ কারণে পানি ময়লা ও ঘোলা হতে পারে। পানিতে ময়লা আসার আরও একটি কারণ হচ্ছে পাইপে যখন পানির চাপ কম থাকে তখন পুরনো পাইপগুলোর বিভিন্ন স্থানের ছিদ্র পথ দিয়ে ময়লা ঢুকে পড়ে। ওই ময়লা ঘর পর্যন্ত চলে যায়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য এডিবির অর্থায়নে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে। নতুন পাইপলাইন বসে গেলে আর কোন সমস্যা থাকবে না। নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে ওয়াসার পানির দুর্গন্ধ দূর হবে। বৃষ্টি হলেও ওয়াসার পানি অনেকাংশে ভাল হবে। পানিতে ময়লা পাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে বাসার ‘রিজার্ভ ট্যাঙ্ক’ পরিষ্কার না থাকলে পানিতে ময়লা আসতে পারে। অনেক বাড়ি আছে দীর্ঘদিন ধরে এসব ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা হয় না। তবে কারও কাছ থেকে অভিযোগ পেলে আমরা লোক পাঠিয়ে পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে বাড়ির মালিককে জানিয়ে দেই কেন কি কারণে পানিতে ময়লা আসছে। যদি ওয়াসার কোন ত্রুটি থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা দূর করা হয়। সায়েদাবাদের পানি গুলিস্তান এলাকা পর্যন্ত বড় জোর সরবরাহ হয়ে থাকে। মগবাজার, মালিবাগ, উত্তর শাজাহানপুর, শাজাহানপুর এলাকার পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ বেশি হতে পারে। কিছু এলাকার পাইপলাইন পুরনো হওয়ায় পানিতে ময়লা আসতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে রাজধানীতে ৬০২টি গভীর নলকূপ এবং ৪টি পানি শোধনাগারের মাধ্যমে ২১০ থেকে ২২৫ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২১০ থেকে ২১৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। তবে বর্তমানে দৈনিক ২০৮ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রায় ১৭ কোটি লিটার পানি ঘাটতি রয়েছে। ওয়াসার পানির ৮৭ শতাংশ ভূগর্ভস্থ এবং অবশিষ্ট ১৩ শতাংশ ভূপৃষ্ঠের উৎস থেকে সংগ্রহ হচ্ছে। মাত্র ১৭ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমের জন্য বিশেষ কোন অসুবিধা দেখা দেবে না। ওয়াসার কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, গত কয়েক দিন ধরে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ আসছে। তবে এ পানি খেলে কোন ক্ষতি হবে না। তাছাড়া চলতি শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীসহ আশপাশের এলাকায় পানি সঙ্কট হবে না।
×