ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাঈদীকে চাঁদে দেখা গুজবের জামায়াতী বিভীষিকার সেই দিন আজ

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ৩ মার্চ ২০১৬

সাঈদীকে চাঁদে দেখা গুজবের জামায়াতী বিভীষিকার সেই দিন আজ

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ার মানুষের মন থেকে বিভীষিকার সেই দিনের কথা মুছে যায়নি। ৩ মার্চ ২০১৩। দিন শুরুর প্রাক্কালে মধ্য রাতে জামায়াতীরা সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব তুলে কী তা-বই না চালিয়েছে। কোন মানুষকে চাঁদে দেখা যায় এমন একটি শিরেকী বিষয়কে পুঁজি করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে কীই না করেছে জামায়াত-শিবির। গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন, ভাংচুর, বোমা, ককটেলবাজি, লুটপাট সন্ত্রাসের সকল সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ভোর থেকে শহর জুড়ে জামায়াতীদের লাঠি নিয়ে হুঙ্কার দেয়া মিছিল। সাধারণ মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন লাগিয়ে তা-ব শুরু করে দেয়া হয়। বগুড়ার সকল পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন লাগায় তারা। করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিস পুড়িয়ে দেয়। এস এ পরিবহনের অফিস পুড়িয়ে ভস্মীভূত করার পর শেরপুরে রোডের আশপাশে যত প্রতিষ্ঠান আছে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়ে আগুন লাগায়। আওয়ামী দলীয় সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল মান্নানের চকলোকমানের বাসভবন, আওয়ামী লীগ জেলা সভাপতি মোমতাজ উদ্দিনের কালিতলা বাসভবন পুড়িয়ে দেয় জামায়াতীরা। নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের প্রতিটি অফিস ভাংচুর করে গান পাউডার দিয়ে আগুন লাগায় জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা। উপজেলা কমপ্লেক্সের একটি অফিসও রক্ষা পায়নি আগুনের হাত থেকে। যাবতীয় নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার রেশ এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়। অল্পের জন্য রক্ষা পায় শাজাহানপুর থানা। জামায়াতী ক্যাডাররা যখন শাজাহানপুর থানার মালখানার অস্ত্র লুট করার প্রস্তুতি নেয় তখনই কাছাকাছি অবস্থানের ক্যান্টনমেন্ট থেকে একটি গাড়ি থানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে জামায়াতীরা পালিয়ে যায়। এই দিনে শাজাহানপুর থানাসহ পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার পরিকল্পনা করা হয় শাজাহানপুর উপজেলা জামায়াত নেতা ইয়াসিন আলীর বাড়িতে। এ ছাড়া জামায়াত-শিবির আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। ফেসবুকে চাঁদে সাঈদীর ছবি কৌশলে ট্যাগ করে বিভ্রান্তি ছড়ায়। বগুড়ায় জামায়াতী তা-বের এত বড় ঘটনার অভিযুক্তদের বিচার আজও হয়নি। জামায়াত নেতা ইয়াসিন আলী ও নন্দীগ্রামের কয়েকজন নেতা ছাড়া কেউ গ্রেফতারও হয়নি। অভিযোগ পাওয়া যায় মামলা দায়েরের সময় অভিযুক্তদের ভুল নাম ঠিকানা, ঘটনার বিবরণ দুর্বল করে অভিযোগপত্র দেয়ায় অনেক অভিযুক্তরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনার পর বগুড়ায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বগুড়ায় বদলি হতে চাননি। নাম প্রকাশ না করতে চেয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, বগুড়া জেলার মানুষ ভ্রান্ত গুজবে বিশ্বাস করে সাঈদীকে চাঁদে দেখে। সেখানে কাজ করা কিছুটা কঠিনই হবে। অবশ্য সেদিনের এই ঘটনার পর বগুড়ার মানুষ তা মনে করে নিজেরাই এখন লজ্জা পায় এই ভেবে কী ভুলই না তারা বুঝেছিল। যার সুযোগ নিয়ে জামায়াতীরা ভয়াবহ তা-ব চালিয়েছে। জামায়াতীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের যতটুকু ধারণা ছিল এই ঘটনার পর তা পাল্টে গিয়েছে। লোকমুখে শোনা যায়- জামায়াত পারে না এমন কিছু বোধহয় নেই।
×