ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সহায়তা দিচ্ছে জাপান

উপজেলা পরিষদ কার্যকর করার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

উপজেলা পরিষদ কার্যকর করার  উদ্যোগ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ উপজেলা পরিষদ কার্যকর করতে সহায়তা দিচ্ছে জাপান। এজন্য হাতে নেয়া হচ্ছে উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে অতিরিক্ত তহবিল প্রদানের মাধ্যমে উপজেলার প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করে উপজেলা পরিষদের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ১ হাজার ৫৯ কোটি ৬৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১০৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪৯ হাজার এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) থেকে ৯৫৬ কোটি ১৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে একজন পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক এবং একজন উপ-প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এ.এন. সামছুদ্দিন আজাদ চৌধুরী কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উপজেলা পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণের ফলে স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম নির্বাচন এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বাস্তবায়ন যথাযথ হবে। অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কার্যকরী সংযোগ স্থাপিত হলে স্থানীয় পর্যায়ে সেবার মান ও পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, তাই প্রকল্পটির অনুমোদন বিবেচনাযোগ্য। তিনি জানান, প্রকল্পটির অনুকূলে চলতি (২০১৫-১৬) অর্থবছরে সরকারী তহবিলের অর্থের চাহিদা দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ২১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগের দেয়া মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো (এমটিবিএফ) প্রত্যয়নপত্রে প্রয়োজনীয় সরকারী তহবিলের অর্থের সংস্থান করার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ এই তিন স্তরের কাঠামো রয়েছে। স্থানীয় সরকার কাঠামোয় স্বায়ত্তশাসনের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালীকরণ এবং কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনাকে বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে। এর অংশ হিসেবে উপজেলা পরিষদকে স্থানীয় সরকারের কেন্দ্রবিন্দু ধরে উল্লেখিত এ প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠান বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ এবং কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও জবাবদিহিতা উন্নয়ন, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে জড়িত মাঠ পর্যায়ে ও কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মরত সকল সদস্যের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এসব দিক বিবেচনা করে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির উপর ২০১৫ সালের ১ নবেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ৯৮৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ব্যয় ধরে হয়েছিল ২৭ কোটি ৯৩ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯৫৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু পিইসি সভার সুপারিশ বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে স্বাক্ষরিত মিউনিটস অব ডিসকাশন (এমওডি) এর সঙ্গে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসাসমঞ্জস্যতা দেখা দেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর পুনরায় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১ হাজার ৫৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয় ধরে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে বাস্তায়নের পরিকল্পনা কমিশন সুপারিশ করে। এছাড়া প্রকল্পটির উদ্দেশ্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, কার্যকর বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণকে সেবা প্রদান, পল্লী ও নগর বৈষম্য দূরীকরণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনে প্রকল্পটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পিইসি সভায় প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে একজন পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক এবং একজন উপ-প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এজন্য অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির সুপারিশ পুনরায় গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সাথে প্রকল্পের জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির রূপরেখা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) অন্তর্ভুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) জাপান ডেস্ক সূত্র জানায়, ৩৬তম ওডিএ লোন প্যাকেজের আওতায় যে ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ ঋণের বার্ষিক সুদের হার মাত্র দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। যা ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। সংস্থাটির সুদের হার বাংলাদেশের অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী বিশ^ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), রাশিয়া, চীনের তুলনায় অনেক কম। আবার ঋণের অর্থের একটি বড় অংশ অনুদান হিসেবে প্রদান করে জাইকা। যা পরবর্তীতে জাপান ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (জেডিএফ) মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করা হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, প্রথম পর্যায়ে ১০০টি উপজেলায় এবং পরবর্তীতে ধাপে ধাপে সকল উপজেলায় এ প্রকল্পে কার্যক্রম সম্প্রসারিত হবে। প্রকল্পের আওতায় ড্রেনেজ সিস্টেম, শিক্ষা, কৃষি চিকিৎসা ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট সংক্রান্ত অবকাঠামো উন্নয়ন, সংস্কার ও বিভিন্ন কাজ করা হবে। কার্যকর সেবা প্রদানের জন্য শিক্ষা সংক্রান্ত ইকুইপমেন্ট যেমন, চেয়ার, টেবিল, ব্ল্যাকবোর্ড, স্কুলবাস ইত্যাদি সংগ্রহ করা হবে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, মেশিন, রোগীর বিছানা, এ্যাম্বুলেন্স ইত্যাদি সংগ্রহ করা হবে। পানি সরবরাহের জন্য নতুন কূপ খনন, পুরনো কূপ প্রতিস্থাপন, সংস্কার, বৃষ্টির পানির জন্য জলাধার নির্মাণ করা হবে। কৃষির জন্য কৃষি কাজে সেচ এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান, যানবাহন, পাইকারি বাজারের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের নিয়মিত কার্যক্রমের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মরত সব সদস্যের দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে জাপান। স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি নিরবচ্ছিন্নভাবে এদেশের অগ্রগতিতে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। ১৯৭২ থেকে এখন পর্যন্ত ঋণ ও বিভিন্ন প্রকার অনুদান দিয়েছে জাপান।
×