ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সখীপুরে উজাড় হচ্ছে গাছ

সংরক্ষিত বনে ৫৫ অবৈধ করাত কল

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

সংরক্ষিত বনে ৫৫ অবৈধ করাত কল

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ সখীপুরে সংরক্ষিত বনের ভেতরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ৫৫ করাত কল আবার চালু হয়েছে। বিগত ২০১২ সালে বন বিভাগ অবৈধ করাত কলগুলো উচ্ছেদের জন্য মাঠে নামলে সে সময় বন্ধ হয়ে যায়। বন বিভাগ ওই সময় ৫১টি করাত কলের বিরুদ্ধে ৫১ মামলা দায়ের করে। তিন মাস বন্ধ থাকার পর বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা ও করাত কল মালিকদের যোগসাজশে ৫১টি করাত কলের স্থলে ৫৫টি করাত কল আবার চালু হয়। রাতারাতি করাত কলগুলো গড়ে ওঠায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ওই করাত কলে দিনরাত সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ চেরাই করে পাচার করা হচ্ছে। জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওইসব করাত কলগুলো না থাকলেও তারপর থেকে বনের ভেতরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নামে বেনামে করাতগুলো গড়ে তোলে। টাঙ্গাইল বন বিভাগের বহেড়তৈল, হতেয়া, ধলাপাড়া ও বাঁশতৈল রেঞ্জের আওতায় সখীপুর উপজেলায় ১৪টি বিটে ৫৫টি এবং পৌরসভায় লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ ও লাইসেন্সের জন্য আবেদনরত অবস্থায় বেশ কয়েকটি করাত কল রয়েছে। ফলে উজাড় হচ্ছে বন, ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। প্রতিমাসে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের চেরাই কাঠ পাচার হচ্ছে। ওইসব করাত কল থেকে বন বিভাগের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত মাসোয়ারা পাচ্ছেন এমনও অভিযোগ রয়েছে। সংরক্ষিত বনঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের ভেতরে করাতকল স্থাপনের বিধান না থাকলেও সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যেই করাত কলগুলো গড়ে উঠেছে। জানা যায়, বহেড়াতৈল রেঞ্জের পাঁচটি বিটের আওতায় নাকশালায় ২, দাড়িয়াপুরে ৪টি, ডাবাইলে ২, গোহাইলবাড়িতে ২, আইলসার বাজারে ৩, কুতুবপুরে ৩, দেবরাজে ৩, আড়াইপাড়ায় ১, মরিচায় ৩, হামিদপুরে ২, সাপিয়া চালায় ২, দুর্গাপুরে ৩, বড়চওনা বাজারে ২, মহানন্দপুরে ২, তৈলধারা বাজারে ২, ইন্দারজানি ২, বাসার চালা ১, ঢনঢনিয়া ১, নামদারপুর তিনটি অবৈধ করাত কল রয়েছে। হতেয়া ও বাঁশতৈল রেঞ্জের পাথারপুর ১, হতেয়া গ্রামে ২, চুলবাইদে ২, হলদে চালায় ১, করটিয়া পাড়া জিনিয়া পাড়া ১, করটিয়া পাড়া ভাতকুরা চালায় ১, চতলবাইদ ওয়াজেদ মাকের্টে ১, তক্তার চালা বাজারে ২, দেওদীঘি বাজারে ১, ইছাদীঘিতে একটি অবৈধ করাত কল স্থাপন করা হয়েছে। অধিকাংশ করাত কলের দূরত্ব সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কয়েক শ’ গজ দূরে। করাত কলগুলোতে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের শাল, গজারি, আকাশমণি, ইউকেলিপটাস, সেগুনসহ মূল্যবান কাঠ চেরাই করা হয়। কাঠ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রের হিসেব মতে, প্রতিমাসে ৫৫টি অবৈধ করাত কল থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের চেরাই কাঠ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। অবৈধ করাত কলের একাধিক মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থানীয় বন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে এলাকাবাসীর চাহিদা মিটানোর জন্য করাত কলগুলো চালু করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, পৌরসভার করাত কলেও রেজিস্টার মেনে কাজ করে না। সখীপুর পৌরসভার বৈধ করাত কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, আমরা জেনেছি বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধ করাত কল আবার চালু হয়েছে। প্রতিটি করাত কল থেকে তিনি প্রতিমাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা করে মাসোয়ারাও নিচ্ছেন। এছাড়া লাইসেন্স নবায়নেও তিনি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সখীপুর বন বিভাগের বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কয়েকটি করাত কল সচল হওয়ার কথা শুনেছি। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা বনায়ন কমিটির সভাপতি এসএম রফিকুল ইসলাম জানান, আবার সচল হওয়া করাত কলগুলোর বন্ধে ইতোমধ্যে অভিযান চালানো হয়েছে। কাঁকড়াজানের বৈলানপুর থেকে দুটি করাত কল উচ্ছেদ করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা (ডিএফও) মাসুদ রানা জানান, অবৈধ করাত কলের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে। বন বিভাগের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×