ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন বলিউডের ফ্যাশন কুইন সাধনা শিবদাসানি

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫

চলে গেলেন বলিউডের ফ্যাশন কুইন সাধনা শিবদাসানি

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ বলিউডে ‘ফ্যাশন কুইন’খ্যাত প্রবীণ অভিনেত্রী সাধনা শিবদাসানি আর নেই। শুক্রবার মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। এক বছর আগে টিউমার ধরা পড়েছিল তার। অস্ত্রোপচারও হয়। দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছিলেন নিঃসন্তান সাধনা। তবে তার অনেক আগে থেকেই সাধনা সরে গিয়েছিলেন আড়ালে। স্বামী প্রযোজক আরকে নাইয়ার মারা যান ১৯৯৫ সালে। পালিতা মেয়েকে নিয়ে একাই থাকতেন তখন থেকে। সেই একাকীত্ব সঙ্গে নিয়েই চলে গেলেন। শনিবার তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান হয়। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষের করাচিতে ১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া এই অভিনেত্রীর শৈশবটা কেটেছে দেশভাগের অস্থিরতায়। সে সময় তার পরিবার চলে আসে বোম্বেতে। কলেজের মঞ্চে অভিনয় করতে করতেই মাত্র ১৫ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পান সাধনা। ১৯৫৫ সালে রাজ কাপুরের ‘শ্রী ৪২০’ চলচ্চিত্রে ‘মুড় মুড় কে না দেখ মুড় মুড়কে’ গানে কোরাস গার্লের ভূমিকায় প্রথম দেখা যায় তাকে। এরপর ১৯৫৮ সালে ভারতের প্রথম সিন্ধি চলচ্চিত্র ‘আভানা’-তে অভিনয় করেন সাধনা। এজন্য এক রুপী পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৬০ সালে ‘লাভ ইন সিমলা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় তার। এরপর ‘পরখ’, ‘প্রেমপত্র’, ‘উয় কন থি’, ‘ওয়াক্ত’, ‘মেরা সায়া’, ‘হাম দোনো’, ‘এক ফুল দো মালি’, ‘ছোট সরকার’সহ মোট ৩৫টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু অভিনয়ের জন্য তিনি জনপ্রিয় ছিলেন না, ‘ফ্যাশন কুইন’ হিসেবেও বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করেছিলেন। তার ট্র্যাডিশনাল স্যালোয়ার-কুর্তার ফ্যাশন এখনও জনপ্রিয়। তার হেয়ারকাট তথা কপালের ওপর ছোট করে কাটা চুল এখনও সমানভাবে গ্রহণযোগ্য। পরে সেই হেয়ারকাটের নামই ‘সাধনা কাট’ হয়। ব্রিটিশ অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের আদলে কপালে ফেলে রাখতেন এক গোছা চুল। আর তাতেই হয়ে উঠলেন সে আমলের ফ্যাশন আইকন। চরিত্রের প্রয়োজনে বিভিন্ন চলচ্চিত্রে এই চিরচেনা রূপের বাইরে পর্দায় হাজির হলে তার ভক্তরা ক্ষুব্ধ হতেন। অভিনয় জীবনে ‘লাভ ইন সিমলা’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সত্তরের দশকে এসে ধীরে ধীরে নিজেকে রূপালী জগত থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেন। চরিত্রাভিনেত্রী হয়ে থাকতে চাননি তিনি। হাইপারথাইরয়েডিসমের কারণে তার চোখের স্বাভাবিক আকার নষ্ট হতে থাকে, যার ফলে জনসমক্ষে আসা একেবারেই বন্ধ করে দেন। তিনি চেয়েছিলেন ভক্তদের মনে তার সৌন্দর্য অমলিন থাকুক। এই স্বেচ্ছা অন্তরালে চলে যাওয়ার বিষয়ে সাধনার সঙ্গে সুচিত্রা সেনের মিল পান অনেকে। অল্প কয়েকজন বান্ধবী নন্দা, ওয়াহিদা রহমান, হেলেন আর আশা পারেখ ছাড়া কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। এমনকি নিজের খুড়তুত বোন অভিনেত্রী ববিতার সঙ্গেও না। বছর দুয়েক আগে একটা বলিউডি পুরস্কার রজনীতে এসেছিলেন কেবল। সারাজীবনের কাজের জন্য সম্মানিত করা হয়েছিল তাকে। আশা ভোঁসলের একটা বাড়িতে এ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে থাকতেন সাধনা। সম্প্রতি তা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও হয়। অবশেষে সব মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন উপমহাদেশের বরেণ্য এই অভিনেত্রী।
×