ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে পৃথক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতারা

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্যই ওরা মানুষ হত্যা করছে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২ নভেম্বর ২০১৫

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্যই ওরা মানুষ হত্যা করছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করে দেশকে রক্ষা করার জন্য দেশের সকল গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাঁরা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে একাত্তরে পরাজিত শক্তিরা এসব কাজ করছে। দু’বিদেশী নাগরিক হত্যা, হোসেনী দালানে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা এবং মুক্তমনা লেখকদের ওপর হামলা একই সূত্রে গাঁথা। জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ বন্ধ করার জন্যই এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তবে এসব গুপ্তহত্যা চালিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর বন্ধ করা যাবে না। রবিবার রাজধানীতে পৃথক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা এসব কথা বলেন। বিকেলে সোহ্রাওয়ার্দীর জনসভাস্থল পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ব্লগারসহ মুক্তচিন্তার মানুষকে যারা হত্যা করছে, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার জন্যই করছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মারা পরিকল্পিতভাবেই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এদের লক্ষ্য একটাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করা। এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, দুই-একটি ঘটনা দিয়ে সরকার বিব্রত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাহলে তো বহু আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিব্রত হয়ে যেত। ওখানে তো বহু ঘটনা ঘটেছে। এটা রাজনৈতিক হত্যাকা- আমরা সব সময় বলে এসেছি। তিনি বলেন, দুই-একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ এটাও বলার সুযোগ নেই। পৃথিবীর বহু দেশে এরকম ঘটনা ঘটে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে একাত্তরে পরাজিত শক্তিরা এসব কাজ করছে। সরকার আর যাই করুক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে কোন ধরনের আপোস করবে না। নিহত দিপনের বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হকের পুত্রের বিচার না চাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, একজন পুত্রহারা পিতা সন্তানের হত্যার বিচার চায় না, এটা বাংলাদেশে প্রথম। পৃথিবীতেও এমনটা আমি দেখিনি। এটার কারণ একটাই হতে পারে, যে পুত্র হত্যা হয়েছে তার বাবা অধ্যাপক সাহেব হয়ত ওই রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী। তারা এই হত্যাকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেই উনি উনার দলের লোকজনদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চান না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক। আমিও একজন বাবা। বাবা হিসেবে আমি নিজেও লজ্জিত তাঁর এই বক্তব্যে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, আগে হত্যাকা-ের শিকার ব্লগারসহ সব হত্যাকা-ের তদন্ত হচ্ছে। এর আগে বেশকিছু আসামিও ধরা পড়েছে। মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই এটা বলার সুযোগ নেই। যেহেতু ঘাতকচক্র একটি ধর্মীয় ছদ্মাবরণে এ ধরনের কমকা- ঘটিয়ে সহজেই মিশে যাচ্ছে। ফলে তাদের চিহ্নিত করে বের করতে কিছুটা সময় লাগছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সাত্তার এমপি, অসীম কুমার উকিল, নগর আওয়ামী লীগের শাহে আলম মুরাদ, সহিদুল ইসলাম মিলন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ এমপি, সাবেক ছাত্র নেতা শাহে আলম, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন প্রমুখ। বিএনপি-জামায়াত ও ঘাতকদের উদ্দেশ্যে অভিন্ন- ড. হাছান ॥ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি মুক্তমনা লেখকদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মুক্তমনা লেখকদের ওপর আঘাত হানা আর বাংলাদেশের ভিত্তিমূলে আঘাত হানার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আর তাই গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করে দেশকে রক্ষা করতে হবে। রবিবার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল বৈঠক মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, দু’বিদেশী নাগরিক হত্যা, হোসেনী দালানে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা ও শনিবার মুক্তমনা লেখকদের ওপর হামলা একই সূত্রে গাঁথা। ‘সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ’ মর্মে সম্প্রতি বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার বিবৃতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর (খালেদা জিয়া) এ ধরনের একটি বিবৃতি দেয়ার জন্যই সাম্প্রতিক সময়ের এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মধ্যে অনেক দল রয়েছে যাদের উদ্দেশ্য আর মুক্তমনা লেখকদের ওপর হামলাকারীদের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। তারা দেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো উগ্র মৌলবাদী রাষ্ট্র বানাতে চান। খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জামায়াত জঙ্গীবাদের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে দাবি করে বলেন, জামায়াতকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক শক্তির মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল রয়েছে যারা জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষক। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদীদের সঙ্গে আতাত করে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যায় না। চিত্রনায়ক ফারুকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফাল্গুনী হামিদ, দিলারা ইয়াসমিন ও ড্যানী সিডাক প্রমুখ।
×