ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাক্সিক্ষত আবেদন জমা পড়েনি

স্থগিত আইপিওয়ের ফের চাঁদা গ্রহণ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

স্থগিত আইপিওয়ের ফের  চাঁদা গ্রহণ শুরু

অর্র্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) চাঁদাগ্রহণ স্থগিত করার পর আরও একটি কোম্পানির পুঁজি উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। রবিবার থেকে এই কোম্পানির চাঁদা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। কোম্পানিটির চাঁদা গ্রহণ চলবে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে প্রথম দিনে আশানুরূপ আবেদন করতে দেখা যায়নি বিনিয়োগকারীদের। এর আগে গত ২৩ আগস্ট এক বিজ্ঞপ্তিতে বিএসইসি কোম্পানিটির আইপিও প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিল। ২৪ আগস্ট থেকে চাঁদা গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু ঠিক কি কারণে আইপিও স্থগিত করেছিল তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। চাঁদা গ্রহণের আগের দিন সন্ধ্যায় উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে চিঠিতে আইপিও স্থগিতের বিষয়টি কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কোম্পানিটির পক্ষ থেকে কিছু বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেটি জানানোর পরে কমিশন আবারও চাঁদা গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে বলে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আশীষ কুমার সাহা জানিয়েছেন। কিন্তু মাত্র দশ দিনের মতো ঠিক কি জানানো হয়েছে তা তিনি বলেননি। তবে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বাজারে যেখানে শেয়ারের চাহিদা কম ঠিক সেখানে এভাবে সরবরাহ বাড়ানো ঠিক নয়। আর সিমটেক্সের মতো কোম্পানিকে কোনভাবেই ১০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে বাজার থেকে পুঁজি উত্তোলনের অনুমোদন দেয়া ঠিক হয়নি। অপরদিকে সিমটেক্সের অর্থকর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, কমিশনের পক্ষ থেকে কোম্পানিটি সরেজমিনে দেখা হয়নি। তারা প্রসপ্রেক্টাসের যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণ করে অনুমোদন দিয়েছে। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন বাছ-বিচার ছাড়াই অধিক প্রিমিয়াম নিয়ে কমিশন বাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দিচ্ছে। যেগুলোর বেশিরভাগই এখন ইস্যু মূল্যের নিচে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে অনেক নামসর্বস্ব কোম্পানিও নানা ফাঁক-ফোকরে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সিমটেক্সের মতো আরও দুটি কোম্পানিটির আইপিও চাঁদা গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছিল। পরে আবারও তা অনুমোদনও দেয়। এছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নামের একটি কোম্পানির আইপিও স্থগিত করে রেখেছে কমিশন। তবে সিমটেক্সের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। তারা মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানেই স্থগিত আইপিওর চাঁদা গ্রহণ আবারও শুরু করতে পেরেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যৌথভাবে এ কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে রয়েছে এএফসি ক্যাপিটাল ও ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড। কোম্পানিটি বাজারে মোট ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে ৬০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। সিমটেক্সের আইপিও প্রসপেক্টাসে সংযুক্ত পরিচালন কার্যক্রমের নগদ প্রবাহ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৩ সালের তুলনায় গত বছর কোম্পানির টার্নওভার প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৩ সালে কোম্পানির টার্নওভার ছিল ১০১ কোটি টাকা, যা ২০১৪ সালে ১৩১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ সময়ে পরিচালন মুনাফা প্রায় ২১ শতাংশ বেড়েছে। আইপিওর প্রসপেক্টাসে ২০১৪ সালে কোম্পানির দেনাদার হিসাব ও কাঁচামাল দেখানো হয়েছে ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, সম্পদমূল্য বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কোম্পানির দেনাদার হিসাব ও মজুদ কাঁচামালের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে কোম্পানির কোন বিনিয়োগ না থাকলেও ২০১৪ সালে ৬ কোটি ৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে। ২০১৪ সালে কোম্পানির ব্যাংক ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। এ সময় দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এছাড়া স্বল্পমেয়াদী ঋণের পরিমাণ ২০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। চলতি বছর কোম্পানিটির ৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার দীর্ঘমেয়াদী ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এদিকে পুনর্মূল্যায়নের পর কোম্পানির সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আর ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এমনকি আইপিও প্রসপেক্টাসে বলা হয়েছে, কোম্পানিটির আইপিওর উত্তোলিত টাকার ৫২ দশমিক ৭০ শতাংশ বিনিয়োগ এবং ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ট্রাস্ট ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদী ঋণ পরিশোধ করবে। তাই বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সিমটেক্স নামের কোম্পানিটির প্রথম থেকেই অতি মূল্যায়িত হয়ে বাজারে অন্তর্ভুক্ত হবে। যা বিনিয়োগকারীদের লোকসানের মধ্যে ফেলবে। কারণ একইভাবে আরও কয়েকটি এমন কোম্পানি তালিকাভুক্তির পর ইস্যুমূল্যের নিচে চলে গেছে। কোম্পানি বাজার থেকে ঠিকই বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে নিয়েছে।
×