ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভাঙ্গায় জাফরউল্লার পথসভায় গুলি, ওসিসহ আহত সাত

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

ভাঙ্গায় জাফরউল্লার পথসভায় গুলি, ওসিসহ আহত সাত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লার পথসভায় শটগানের গুলিতে সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সাতজন আহত হয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দীপক চন্দ্র মজুমদারের শটগান থেকে অসাবধানবশত গুলি বের হয়ে ঘটনাটি ঘটে বলে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দাবি। তবে দীপক চন্দ্র মজুমদার এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। এমন ঘটনার নেপথ্যে আর কোন ঘটনা আছে কিনা সে বিষয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে কোন গোষ্ঠী এমন ঘটনা ঘটিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে কিনা বা অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। ফরিদপুর থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ভাঙ্গার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের পরারন গ্রামের মুন্সিবাড়ি কুমপাড় এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। কাউলিবেড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রওশন কবীর জানান, কাজী জাফরউল্লা একটি ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে সেখানে যান। পরে তিনি একটি পথসভায় অংশ নেন। এ সময় কাজী জাফরউল্লার সঙ্গে থাকা নেতাদের সঙ্গে গ্রামবাসীর কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা শটগান থেকে গুলি চালান। এমন ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সমাবেশে আগতরা ছোটাছুটি শুরু করেন। যে যার যার মতো নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে দৌড়ঝাঁপ করতে থাকেন। গুলিতে স্থানীয় ছয়জন আওয়ামী লীগ নেতা ও ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ মোট সাতজন আহত হন। আহত আওয়ামী লীগ কর্মী সাহেব আলী (৪৮), আজিমনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোবহান মিয়া (৬৫), আওয়ামী লীগ নেতা জমির মাতুব্বর (৬০), কাউলিবেড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরমান মাতুব্বর (৫৬), কাউলিবেড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহজাহান মিয়া (৫০) ও সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইমারত আকনকে (৫৬) ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহতদের পায়ে ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আর আহত ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল ইসলামকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আহত সাহেব আলী (৪৮) জানান, তাঁরা সভাস্থলে বসে ছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি শব্দ হলো। একটি বুলেটে আমি আহত হই। ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল ইসলাম জানান, পথসভায় কাজী জাফরউল্লা ভাষণ শুরু করার কয়েক মিনিট পরেই মঞ্চের এক প্রান্তে অবস্থান নেয়া ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দীপক মজুমদারের ব্যবহৃত শটগান থেকে অসাবধানবশত গুলি বেরিয়ে যায়। এ সময় সভায় উপস্থিত থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। পরে পুলিশ ও স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। শটগানটি জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতা দীপক চন্দ্র মজুমদারের দাবি, তিনি ওই সভায় ছিলেন না। অভিযোগটি ভিত্তিহীন। এদিকে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন-উর-রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, সভার পাশেই আওয়ামী লীগ নেতা দীপক চন্দ্র চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তাঁর শটগানের গুলিতেই ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সাতজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর দীপক চন্দ্র চৌধুরীকে আর সেখানে পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে শটগানটি জব্দ করা হয়। ঘটনার বিষয়ে দীপক চৌধুরীর বক্তব্যও জানা যায়নি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তবে গুলিটি দীপক চৌধুরী স্বেচ্ছায় করেছেন, নাকি অসাবধানবশত বেরিয়ে গেছে সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। শটগান থেকে একটিই বুলেট বেরিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। শটগানটি দীপক চৌধুরীর নামে লাইসেন্স করা। প্রসঙ্গত, শটগানের প্রতিটি বুলেটের ভেতরে অনেক ছোট মার্বেলের মতো বুলেট বা স্পিøন্টার থাকে। যা ছরার গুলি হিসেবে পরিচিত। প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে কাজী জাফরউল্লাকে হারিয়ে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নিক্সন।
×