ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্রগতির পথে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অগ্রগতির পথে বাংলাদেশ

মানবিক প্রগতির সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্পর্কটা অতি গভীর। কারণ মানবিক প্রগতি হলে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক প্রগতি বাড়ে। কল্যাণমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মানবিক প্রগতি তথা মানব সূচকের উন্নতি প্রয়োজন হয়। মানবিক প্রগতি নিশ্চিত হলে অর্থনৈতিক প্রগতি সাধিত হয়। তবে মানবিক প্রগতি ছাড়াও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়। সেক্ষেত্রে সমাজে বঞ্চনা তৈরি হতে পারে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানবিক প্রগতি বিষয়ে স্মারক ভাষণে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন এই মূল্যায়নটি তুলে ধরেছেন। তিনি গুরুত্ব প্রদান করেছেন, মানবিক প্রগতির জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে। বিশ্লেষণ করেছেন, মানবিক প্রগতি নিশ্চিত করার জন্য দেশের সব নাগরিকের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ মানব উন্নয়ন বিষয়ের উন্নতি জরুরী। এর মধ্যে রয়েছে শিশুমৃত্যু হার কমানো, শিশুর অপুষ্টি হ্রাস, মাতৃমৃত্যু হার কমানো, শিশুদের স্কুলে অংশগ্রহণ বাড়ানো, নারী উন্নয়নসহ নানা মানবিক সূচক। এসবের ক্ষেত্রে অবশ্য ভূমিকা পালন করতে হয় প্রধানত সরকারকে। কারণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারী পর্যায়ে ভূমিকা পালন করা হয়ে ওঠে না। যদিও বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রে বেসরকারী খাতের অবদান রয়েছে। আরেকটা দিক খোলাসা করেছেন তিনি, গণতন্ত্র হলেই অর্থনৈতিক উন্নতি হবে কিংবা গণতন্ত্র না থাকলে উন্নতি হবেই না, এমন সার্বজনীন কথা বলা যাবে না। একেক দেশের ক্ষেত্রে এটা একেক রকম হবে। যেভাবেই হোক অসাম্য বা বৈষম্য কমাতে পারলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। অবশ্য এ মতও পোষণ করা হয়েছে, গণতন্ত্রে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক না থাকলে উন্নতি হয় না। এক্ষেত্রে আমরা ধরে নিতে পারি, বাংলাদেশে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের ক্ষেত্রগুলো সীমাবদ্ধ। সংসদীয় রাজনীতিতে সংসদ প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হলেও সেখানে বিরোধী দলের প্রায়শ অনুপস্থিতির কারণে তর্ক-বিতর্ক বা আলোচনা হয় না। ফলে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে প্রতিবেশী ভারতের তুলনায়। তবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ১৯৯০ সালে ভারত থেকে পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে এগিয়ে আছে। অমর্ত্য সেন মূলত সব দিক বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের অবস্থানটা পরিষ্কার করেছেন, অগ্রগতির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাংলাদেশকে বিচার করা হয় না বলেই এক ধরনের হতাশা কাজ করে স্বদেশবাসীর মধ্যে। বাংলাদেশের যে অনেক দিক থেকে গুণগত পরিবর্তন হচ্ছে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনার ভেতর দিয়ে মৌলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অগ্রগতি যেমন হয়েছে তেমন হয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। অমর্ত্য সেন তাঁর ‘ভারত : উন্নয়ন ও বঞ্চনা’ শীর্ষক সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থে দেখিয়েছেনও বাংলাদেশে সামাজিক খাতগুলো অনেক উন্নতি করেছে, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ভারতের চেয়েও বেশি। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে, এটা বাস্তব। তবে চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলেও স্বাস্থ্য খাতে তেমন পিছিয়ে নেই। চিকিৎসা ব্যবস্থার যতটুকু উন্নতি হয়েছে তার সুফল বেশিরভাগ মানুষ পায়। এ জন্য বাংলাদেশে মানবিক সূচকে অগ্রগতি হয়েছে। অমর্ত্য সেন পরামর্শ দিয়েছেন এ অগ্রগতি সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশে এমন অগ্রগতি বিস্ময়কর অবশ্য। কিন্তু সেই অগ্রগতির পিঠে পেট্রোলবোমা মেরে দেশকে ধ্বংস করতে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদীরা রাজনৈতিক দলের ছদ্মাবরণে যা করছে, তাতে অমর্ত্য সেনের আশাবাদ মুছে যেতে পারে। তাই দেশবাসীকে অগ্রগতির রথ টেনে নিতে এখনই হতে হবে আরও সতর্ক ও কঠোর।
×