ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৫৭০ কোটি টাকা আদায়ে দুই লাখ কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ০৩:০০, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

৫৭০ কোটি টাকা আদায়ে দুই লাখ কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঋণ নিয়ে সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় মামলার শিকার হচ্ছেন কৃষক। ১৯৯১ সাল থেকে গত বছরের নবেম্বর পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৫ হাজার ৩৭২ জন কৃষকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। কৃষকের কাছে এসব ব্যাংকের বকেয়া অর্থের পরিমাণ মাত্র ৫৭০ কোটি টাকা। গড়ে প্রতি কৃষকের কাছে পাওনা সাড়ে ২৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে গত বছরের জুলাই পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৫৪৫ জন কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে আদালত। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, কৃষকের কাছে সবচেয়ে বেশি বকেয়া আছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। এ পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি কৃষি ঋণের পরিমাণ ২৬৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এজন্য ব্যাংকটি মামলা করেছে ৯১ হাজার ৮৭২ জন কৃষকের বিরুদ্ধে। গড়ে প্রতি কৃষকের কাছে ব্যাংকটির পাওনার পরিমাণ ২৯ হাজার ৩৩৭ টাকা। কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এ পর্যন্ত ব্যাংকটি ৫৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার জন্য মামলা করেছে সাড়ে ৩৪ হাজার কৃষকের বিরুদ্ধে। প্রতি কৃষকের কাছে গড়ে ব্যাংকটির পাওনা ১৫ হাজার ৫৭১ টাকা। ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা পাওনা আদায়ে ২১ হাজার ৭০৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সোনালী ব্যাংক। গড়ে একজন কৃষকের কাছে তাদের পাওনা ২৪ হাজার ৬৫১ টাকা। ৪৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা আদায়ের জন্য জনতা ব্যাংক মামলা করেছে ২০ হাজার ৪৮৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে। কৃষক প্রতি ব্যাংকটির পাওনা ২৩ হাজার ৩৪ টাকা। আঞ্চলিক ব্যাংক রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক মামলা করেছে ৪৫ হাজার ১৩৭ কৃষকের বিরুদ্ধে। তাদের কাছে পাওনা ১৪২ কোটি ২০ লাখ টাকা। গড়ে পাওনা ৪৫ হাজার ১৩৭ টাকা। কৃষকের কাছে রূপালী ব্যাংকের পাওনা ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ব্যাংকের পক্ষ থেকে ৩ হাজার ১৯৫টি মামলা করা হয়েছে। গড়ে ১১ হাজার ৯৫৬ টাকার জন্য মামলা করেছে ব্যাংকটি। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দরিদ্র, ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকদের বিরুদ্ধে এই ধরনের সার্টিফিকেট মামলা করার আইন থাকা উচিত নয়। তাদের মতে, হাজার হাজার কোটি টাকা কোন ব্যক্তি বা গ্রুপ আটকে রাখলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না ব্যাংক। অথচ মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার জন্য কৃষকদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে তাদের ঋণ মওকুফ করা উচিত।
×