ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

জনকণ্ঠে সংবাদ ছাপার পরই প্রশাসনের অভিযান, বন্ধ ‘সুপারস্টার মেডিকেল’

তাসনিমুল হাসান প্রান্ত, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মণিরামপুর, যশোর

প্রকাশিত: ০০:৫১, ১ আগস্ট ২০২৫

জনকণ্ঠে সংবাদ ছাপার পরই প্রশাসনের অভিযান, বন্ধ ‘সুপারস্টার মেডিকেল’

 

দৈনিক জনকণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে মণিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়াজ মাখদুমের নেতৃত্বে অভিযানে কথিত ডাক্তার ডিএম মনিরুজ্জামান মনিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ছয় মাস আগে রাজগঞ্জ বাজারে ‘সুপারস্টার মেডিকেল অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন মনি। এর আগে কেশবপুরে একই নামে একটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদনহীনভাবে পরিচালনার অভিযোগে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে সেটি বন্ধ করে দেয় এবং পরিচালক মিলন হোসেনকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে। পরবর্তীতে মনি বগুড়ার বিতর্কিত ‘সিট ফাউন্ডেশন’ থেকে অনুমতি নিয়ে পুনরায় একই কার্যক্রম শুরু করেন।

জানা যায়, মনি গ্রামে গ্রামে প্রচার চালিয়ে 'ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি', 'নার্সিং', 'মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট', 'মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ', 'ডেন্টাল কেয়ার', 'ল্যাব টেকনোলজি', 'পল্লী চিকিৎসা', এমনকি 'ফার্মেসি' ও 'ফ্রিল্যান্সিং'সহ বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি নিচ্ছিলেন। অথচ ২০১০ সালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এসব কোর্স কেবলমাত্র ম্যাটস অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোথাও করানো যাবে না।

তদন্তে আরও জানা যায়, মনি দীর্ঘদিন ধরে নামের আগে 'ডাক্তার' ব্যবহার করে আসলেও তিনি এমবিবিএস ডিগ্রিধারী নন। তিনি নিজেই শিক্ষকতা করতেন এবং রোগীও দেখতেন। এমনকি তার অপচিকিৎসায় এক নারীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজগঞ্জ এলাকায় নারী মাঠকর্মী নিয়োগ দিয়ে রোগী সংগ্রহের জন্য একটি নেটওয়ার্কও গড়ে তুলেছিলেন তিনি।

অভিযানের সময় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ‘সুপারস্টার মেডিকেল অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’, কিন্তু অনুমোদনের কাগজপত্রে ব্যবহৃত হয়েছে ‘জামান মেডিকেল টেকনোলজি অ্যান্ড নার্সিং ইনস্টিটিউট’ নাম। এই নামের অসঙ্গতিকে প্রতারণার প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মণিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার নিয়াজ মাখদুম বলেন, “নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করে নিজেই শিক্ষকতা ও রোগী দেখার প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। এটি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

এছাড়া অভিযানের দিন রাজগঞ্জ বাজারে লাইসেন্সবিহীনভাবে পরিচালিত ‘তকী ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’কে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একইদিন পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, মৎস্য সংরক্ষণ আইন ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালিয়ে আরও ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনসালটেন্ট ডা. খালেদুজ্জামান মুজাহিদ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আঁখি

×