ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সংস্কৃতি সংবাদ

জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ ‘রি-রিভোল্ট’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ১ আগস্ট ২০২৫

জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ ‘রি-রিভোল্ট’

শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ রি-রিভোল্ট নাটকের দৃশ্য

সময়কে ধারণ করাই শিল্পের ধর্ম। সেই সুবাদে চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ উজ্জীবিত হয়েছে শিল্পের নানা মাধ্যম। ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনকে উদ্দীপ্ত করতে কিংবা স্মরণে রাখতে সৃষ্টি হয়েছে গান-কবিতা থেকে মঞ্চনাটক। আর অভ্যুত্থানের সেই খর¯্রােতা অধ্যায়কে সঙ্গী করে  আলোড়িত হয়েছে শহর ঢাকার নাট্যমঞ্চ। এসেছে বিভিন্ন নাট্যদলের এগোরোটি নতুন নাটক।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মনসুন রেভ্যুলেশন শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় মঞ্চে আসা সেই নাটকগুলো নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো  নয়দিনব্যাপী জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোসব। নাটকের ভাষায় ইতিহাসের পুনর্জন্মের এ আয়োজনে শ্রাবণ সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের প্রতিচ্ছবিময় নাটক ‘রি-রিভোল্ট’। নাট্যদল টিম কালার পরিবেশিত নাটকটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন নায়লা আজাদ। নাটকটি মঞ্চায়ন করে ‘টিম কালার’। 
নাটকের গল্পের গহিনে উঠে এসেছে অভ্যুত্থানের পটভূমি। সেই সংগ্রামী উপলব্ধি¯œাত কাহিনী বলে যায় বিপ্লব তখনই ঘটে যখন একটি সমাজের কিছু মানুষ বর্তমান ব্যবস্থার প্রতি অসন্তোষবোধ করে এবং পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে একমত হয়। এটি ‘কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে একটি প্রাদুর্ভাব’। গত বছরের জুলাই মাসে এই দেশে এমনটাই ঘটেছিল। সেই সময় সকল স্তরের মানুষ কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছাড়াই  রাজপথে নেমে এসেছিল দীর্ঘস্থায়ী কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের দাবিতে। এটি ছিল ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে একটি গণতন্ত্রপন্থি গণঅভ্যুত্থান।

বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশি সহিংসতার পর আন্দোলনটি গতি লাভ করে, আন্দোলনে অসংখ্য আহত ও প্রাণহানি ঘটে, যা জনরোষকে আরও বাড়িয়ে  তোলে এবং শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের দিকে পরিচালিত করে। জুলাই বিপ্লব ছিল গণতন্ত্রের বিজয় এবং জাতির জন্য একটি নতুন যুগের আশা। সেই বিপ্লবের নানা অধ্যায়সহ নতুন আশাবাদের গল্পের প্রকাশ ঘটেছে প্রযোজনাটিতে। 
প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক নায়লা আজাদ বলেন, ‘রি-রিভোল্ট’ হলো একুশদিনের বিক্ষোভ ও সহিংসতা এবং পরবর্তী গণহত্যার রাস্তার শক্তির প্রতিনিধিত্বকারী নাটকীয় নৃত্য। যেহেতু আমরা  কেবল রাজপথের আন্দোলনের ওপর মনোযোগ দিয়েছি, তাই রাস্তার সঙ্গীত এবং নৃত্য, র‌্যাপ এবং হিপ-হপ ব্যবহার করেছি, যা প্রতিবাদের সবচেয়ে জরুরি, আপসহীন, নির্মমভাবে সৎ এবং গভীর কাব্যিক প্রকাশ। 
প্রযোজনাটির নেপথ্য কলাকুশলী হিসেবে কোরিওগ্রাফিতে ছিলেন উম্মে হাবিবা ও সাগত মজুমদার। শব্দ পরিকল্পনা করেছেন  রোকোন ইমন। আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন পলাশ হেনডি  সেন এবং গ্রাফিতিতে বিজয় দাস। নৃত্যশিল্পী হিসেবে ছিলেন উম্মে হাবিবা, মাইশা আহমেদ  রোজা, রামিস যাহার, আনিকা বারই, সনিয়া পারভীন,  মেহরান আফনান জামান, সাফিয়া সারওয়ার শ্রেষ্ঠা, তাহিয়া তারানুনুম খান, হিয়া মেহজাবিন, গৌতম রায়, সাজিদ এহসান,  নুজহাত বিনতে রেজা পুষ্পিতা, শাহ মোহসিন, গোপাল রায়, প্রাণকৃষ্ণ বণিক কেশ, হালিমা তুস, সাদিয়া নিশা, এমডি নাহিয়ান কাবির, অপূর্ব চক্রবর্তী, মিতু রহমান, হৃদয় হালদার, আসিমা কামাল নমী ও সাদিয়া  জোর্দাই আয়েশা।

জুলাই গণঅভ্যত্থান বইমেলা ॥ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশ পুস্তক ও বিক্রেতা সমিতির উদ্যোগে  বৃহস্পতিবার থেকে শুরু জুলাই গণ—অভ্যুত্থান বইমেলা। ছয়দিনব্যাপী এই মেলা চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। 
বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা উদ্বোধন করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলুল মাখমিন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা।   
আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলমান এই বইমেলা প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়া  মেলা প্রাঙ্গণে প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে  অনুষ্ঠিত হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বিষয়ভিত্তিক আলোচনা।

প্যানেল হু

×