ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

পানির চাপে ভেঙে গেল কাটাখালী বাঁধ

ইমামুল মিল্লাত, শেরপুর, বগুড়া

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ২৫ জুলাই ২০২৫

পানির চাপে ভেঙে গেল কাটাখালী বাঁধ

বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের চককল্যাণী গ্রামে পানির প্রবল চাপে ভেঙে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ কাটাখালী বাঁধ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাটির তৈরি এই বাঁধটি ধসে পড়ার পর বিলের পানি প্রবল স্রোতে বাঙালি নদীতে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এতে ওই অঞ্চলে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত মাটির এই বাঁধটির নিচ দিয়ে ছয়টি সরু পাইপলাইনের মাধ্যমে আশপাশের গ্রামের ও বিলের পানি নিষ্কাশন হতো। গত বছর বর্ষায় অতিরিক্ত চাপে বাঁধটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে এলাকাবাসী সংস্কারের দাবি জানায়। তবে সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবার পুরো বাঁধই ধসে পড়ে, ফলে নতুন করে ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়েছে স্থানীয় জনগণ। বাঁধ ভাঙার ফলে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০০ বিঘা ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বাঁধের ওপর অবস্থিত আবুল কাশেম নামের এক ব্যক্তির একটি দোকানঘর, আশপাশের গাছপালা এবং কয়েকটি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থানীয় একটি কাঁচা সড়ক, যা এই এলাকার মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। বর্তমানে পানি নদীর দিকে প্রবাহিত হলেও বন্যার সময় নদীর পানি বাড়লে ভাঙা অংশ দিয়ে উল্টো স্রোতে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এতে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে রয়েছে চককল্যাণী, বিলজয়সাগর, জয়লা বটতলা, জয়নগর, গুয়াগাছি, চকধুলি, জালশুকা, টেংরাখালীসহ শেরপুর ও ধুনট উপজেলার একাধিক গ্রাম। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে বিলজয়সাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়লা বটতলা হাফিজিয়া মাদ্রাসা, চককল্যাণী-চকধুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও।
স্থানীয় প্রবীণ আব্দুল জলিল বলেন, বহু বছর ধরে এই বাঁধ আমাদের ফসল আর ঘরবাড়ি রক্ষা করে এসেছে। এখন সেটা ধসে পড়ায় আমরা গভীর দুশ্চিন্তায় আছি। কৃষক তারিকুল ইসলাম বলেন, আমার প্রায় ৫ বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। গত বছরও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তখন ফসল উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। এবার যদি নদীর পানি বেড়ে যায়, তাহলে ঘরবাড়িও রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। স্থানীয় গৃহবধূ হাজেরা খাতুন জানান, রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় আমার ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। এখন যদি পানি ঢুকে পড়ে, তাহলে আমরা কোথায় যাব? স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকেও কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। বাঁধ রক্ষায় বরাদ্দ ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আজকের এই দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী অবিলম্বে বাঁধ পুনর্র্নিমাণ এবং একটি সুইচ গেট স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তারা জানান, নিজেরা বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করলেও প্রয়োজনীয় অর্থ ও যন্ত্রপাতির অভাবে কাজের অগ্রগতি সম্ভব হচ্ছে না।
সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নূরনবী হিটলার বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর আমরা ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক খান জানান, বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে বাঁধ রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্যানেল

×