
ছবি: সংগৃহীত
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার পূর্ব জলাবাড়ি ইউনিয়নের ভাদুরা খালের ওপর নির্মাণাধীন একটি সেতু নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে সেতুটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। তবে ভাঙার কাজ শুরুর আগেই, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেতুটি নিজে থেকেই ধসে খালে পড়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ।
প্রায় ৬ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম। তিনি মেসার্স ইফতি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। মিরাজুল ইসলাম সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন মহারাজের ছোট ভাই। উভয়েই দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সরকারের পতনের পর থেকেই মিরাজুল আত্মগোপনে আছেন। তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একাধিক চলমান প্রকল্পও থেমে গেছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব জলাবাড়ি খ্রিষ্টানপাড়া থেকে মাদ্রা বাজার সড়কের ওপর দুটি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর মিরাজুল ইসলামের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে এলজিইডি। মোট চুক্তিমূল্য ছিল ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর। তবে মূল ঠিকাদার নিজে কাজ না করে সাবঠিকাদারের মাধ্যমে নির্মাণ শুরু করেন। কাজের মান নিয়ে স্থানীয়দের আপত্তি ছিল শুরু থেকেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রথম সাবঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে আরেক সাবঠিকাদার গার্ডার ছাড়াই সেতুটির ছাদ ঢালাই দেন। ঢালাইয়ের কিছুদিনের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়। তখন স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে এলজিইডি সেতুটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
এলজিইডির নেছারাবাদ উপজেলা প্রকৌশলী মো. রায়সুল ইসলাম বলেন, “কাজ সঠিক নিয়মে না হওয়ায় স্লাব ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণ করতে হবে। গার্ডার ছাড়াই ঢালাই দেওয়ায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। মূল ঠিকাদারকে পাওয়া না যাওয়ায় এখন কাজ বাস্তবায়ন অনিশ্চিত।”
সাবঠিকাদার খোকন মিয়া দাবি করেন, “শ্রমিকেরা ঢালাই শেষে চলে যাওয়ার পর কে বা কারা সেন্টারিং খুলে ফেলেছিল, যার ফলে ক্ষতি হয়েছে। ঠিকাদার মিরাজুল ইসলাম অগ্রিম টাকা তুলে নেওয়ায় কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
এদিকে, স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সেতু নির্মাণে ভয়াবহ দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। প্রকল্পে সরকারি অর্থের অপচয় ও দুর্নীতির পূর্ণ তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
এ ঘটনায় সেতুটি ধসে পড়া ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। এলাকাবাসী দ্রুত সেতু পুনর্নির্মাণ ও দুর্নীতিবাজদের বিচার দাবি করেছেন।
শেখ ফরিদ