ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

নেত্রকোনায় নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে পাঁচ প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা

প্রকাশিত: ২০:৩১, ১৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:৩১, ১৩ জুলাই ২০২৫

নেত্রকোনায় নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে পাঁচ প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য (মেম্বার) মঞ্জুরা আক্তারের বিরুদ্ধে কয়েকটি সরকারি প্রকল্পের কাজ না করেই অথবা আংশিক কাজ করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিষদের ১১ জন সদস্য রবিবার সভা করে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার পরিষদ সদস্যদের অনাস্থা প্রস্তাব পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। অভিযুক্ত মঞ্জুরা আক্তার ওই ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য।

অভিযোগে প্রকাশ, ইউপি সদস্য মঞ্জুরা আক্তার ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচটি প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে টিআর বরাদ্দের আওতায় ইউনিয়ন পরিষদে সাবমার্জিবল পাম্প স্থাপন, আসবাবপত্র ক্রয় ও রংকরণ খাতে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩শ ১০ টাকা বরাদ্দ হলেও কোনো কাজ করেননি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে টিআর (২য় পর্যায়) বরাদ্দের আওতায় বাঁশাটি-বৈখরহাটি রাস্তায় জনৈক আবুল কাশেমের ক্ষেতে ইউড্রেন নির্মাণের নামে ৭১ হাজার ৮৩৭ টাকা বরাদ্দ হলেও কোনো কাজ করেননি। মূলত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয় এলজিএসপি-০৩ এর আওতায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কাবিটা (১ম পর্যায়) বরাদ্দের আওতায় বাাঁশাটি বাজারের পাকা রাস্তার মোড় থেকে রবিকুলের দোকান পর্যন্ত রাস্তাটি বালু ও খোয়া দিয়ে সংস্কার করার কথা থাকলেও নামমাত্র কাজ করে বেশিরভাগ টাকা আত্মসাত করেন। একই অর্থবছরে টিআর (১ম পর্যায়) বরাদ্দের আওতায় বাঁশাটি গ্রামের তারামিয়ার পুকুর পাড় থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত বাবদ ৫২ হাজার এবং টাংগুয়া মসজিদ থেকে আঙ্গারোয়া পর্যন্ত রাস্তা মেরামত বাবদ আরও ৫২ হাজার টাকার বিল তুললেও কোনো কাজ করেননি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইজিপিপি বরাদ্দের আওতায় বাঁশাটি বাজার থেকে আঙ্গারোয়ার একটি পুকুরপাড় পর্যন্ত রাস্তা মেরামত বাবদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলেন। ওই প্রকল্পেরও কোনো কাজ করা হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মঞ্জুরা বেগম দাবি করেন, তিনি কোনো ভুয়া প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত নন। ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের ওপর দায় চাপিয়ে তিনি বলেন, ‘সচিব আমাকে কাগজপত্রে ভুয়া প্রকল্পের সভাপতি বানিয়ে টাকা আত্মসাত করেছেন। এ বিষয়ে আমি মামলাসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর অভিযোগ করেছি।’ 

অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মঞ্জুরা আক্তারের বিরুদ্ধে স্থানীয় এলাকাবাসী ও ইউপি সদস্যদের আনা অভিযোগসমূহের তদন্ত করা হয়েছে। একাধিক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে পরিষদের তথ্য ফাঁস, সভায় বাইরের লোক নিয়ে আসা, সহকর্মী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং জনগণের সাথে শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ, অসদচারণ এবং নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সখ্যতার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে রবিবার ইউনিয়ন পরিষদের ১১ জন সদস্য তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছেন।’ 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘আমি নিজেও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নিয়ে মঞ্জুরা আক্তারের একাধিক প্রকল্প তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। তিনি আমার সঙ্গেও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। ইউপি সদস্যদের অনাস্থা প্রস্তাবটি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো। দুর্নীতির বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

আবির

×