
ছবি:সংগৃহীত
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ও কোলা ইউনিয়নের অন্তত ২০ গ্রামের ১২৮ জন নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, ঘটনার ২০ দিন পর কালীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মোফাজ্জেল হোসেন প্রভাবিত হয়ে এই মামলা নথিভুক্ত করেছেন। মামলায় আসামিদের প্রায় সবাই বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থক। পুলিশের ভয় ও হয়রানির আশঙ্কায় শতাধিক মানুষ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
জানা গেছে, গত জুন মাসে কাবিলপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ কালীগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, আব্দুল লতিফের বাড়ির রান্নাঘরে একটি আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি কর্মী রিফাজুল, রেজাউল ও মিকাইল জানান, এমন কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটেনি। তাদের মতে, গ্রামীণ সামাজিক দলাদলি ও প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতেই এই গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। হয়রানি ও মামলা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যেই ১২৮ জনের নাম এবং আরও কিছু অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এমনকি মামলায় একই ব্যক্তিকে একাধিকবার আসামি করার অভিযোগও রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মামলার এজাহারে খোর্দ তালিয়ান গ্রামের তিনজন আহত হওয়ার কথা বলা হলেও তারা সেদিন সকালে কাবিলপুরে ছিলেন না। তাদের বাড়ি তিন গ্রাম দূরে। ওইদিন সকাল ৮টার দিকে তালিয়ান গ্রামে শ্মশানঘাট এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে তারা আহত হন, যেটি মামলার ঘটনাস্থল নয়। এদিকে আব্দুল লতিফের বাড়িতে লুটপাট বা অগ্নিসংযোগের কোনো ঘটনাও ঘটেনি বলে জানান গ্রামবাসী। তারা বলেন, সেদিন তারা বাড়িতে গিয়ে রান্নাঘরের টিনে মাত্র দুটি কোপের দাগ দেখেছিলেন। বাড়ি থেকে মালামাল সরিয়ে নিয়ে গিয়ে পরে লুটের অভিযোগ তোলা হয়েছে। পূর্বে বিদ্যুৎ লাইনের শর্টসার্কিট থেকে সামান্য আগুন লাগলেও সেটিকে মামলায় বড় করে তুলে ধরা হয়েছে।
থানা সূত্র জানায়, মামলাটি ১৪ জুন দায়ের করা হলেও সেসময় ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বাদীকে এজাহার সংশোধন করে জমা দিতে বলেন। কারণ এজাহারে একাধিক অসঙ্গতি ও গরমিল ছিল। কিন্তু বাদী তা সংশোধন না করেই ২১ জুন মামলাটি রেকর্ড করান ওসি (তদন্ত) মোফাজ্জেল হোসেন। এর আগে ১৮ জুন ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদারকে বদলি করা হয়।
মামলায় খোর্দ তালিয়ান, দৌলতপুর, দামোদরপুর, খালকুলা, সড়াবাড়ীয়া, বড় তালিয়ান, তেঘরিহুদা, বড় ডাউটি, কাবিলপুর, উল্লা, মায়ধরপুর, জয়নগর, খানজাপুর, রামচন্দ্রপুর, বাসুদেবপুর, কামালহাট, রাকড়া, পারখালকুলা, নাটোপাড়া ও কাদিরডাঙ্গা—এই ২০ গ্রামের ১২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩১ নম্বর আসামি তেঘরিহুদা গ্রামের মৃত জাকিরের ছেলেকে আবারও ৮৮ নম্বর আসামি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১ জুন সকাল সাড়ে ৬টায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আসামিরা কাবিলপুর গ্রামের বাদীর বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বাড়ির সাত লাখ টাকার আসবাবপত্র ভাঙচুর করে, তিন লাখ ২০ হাজার টাকার দুটি গরু, ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার দুই ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ দুই লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এরপর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, যা স্থানীয়রা নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রতিবাদ করতে গেলে খোর্দ তালিয়ান গ্রামের তিনজনকে মারাত্মকভাবে জখম করা হয়।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার বর্তমান ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, মামলাটি তার যোগদানের আগেই রেকর্ড করা হয়েছে। মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর কোনো তথ্য থাকলে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওসি (তদন্ত) মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, তিনি মামলাটি রেকর্ড করেন এবং একদিন পর ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেন। তিনি জানান, রান্নাঘরের ছাউনির একটি বাঁশের কিছু অংশ পোড়ার আলামত পাওয়া গেছে এবং সাংবাদিকদের কিছু ছবিও দেখানো হয়। তবে সেই ছবিতে রান্নাঘরের চাল বা আশপাশে বড় ধরনের আগুনের চিহ্ন দেখা যায়নি।
গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, এই মামলায় তারা ভীষণভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরীহ ব্যক্তিদের মামলা থেকে অব্যাহতির দাবি জানান।
মারিয়া