ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

মানিকগঞ্জে দুই দিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, থেমে গেছে জীবনের গতি

আফ্রিদি আহাম্মেদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:১৩, ৯ জুলাই ২০২৫

মানিকগঞ্জে দুই দিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, থেমে গেছে জীবনের গতি

ছবি: জনকণ্ঠ

টানা দুই দিনের মুষলধারে বৃষ্টিতে অচল হয়ে পড়েছে মানিকগঞ্জের জনজীবন। মঙ্গলবার ও বুধবার (৮ ও ৯ জুলাই) একটানা এই বৃষ্টির ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় জলাবদ্ধতা। দুর্ভোগে পড়েছেন সর্বস্তরের মানুষ, তবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন শ্রমজীবী ও দিনমজুররা।

বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন রাস্তাঘাটে জমে গেছে পানি। অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারেননি। অফিস-আদালতেও লোকসমাগম ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। শহরের কর্মচাঞ্চল্য একপ্রকার থমকে গেছে। অথচ খেটে খাওয়া মানুষদের কাছে প্রতিটি দিনই জীবিকার লড়াই।

রিকশাচালক লাল মিয়া বলেন, “আজকের আয় দিয়েই সাপ্তাহিক কিস্তি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সারাদিন যাত্রীই পাইনি। আয় হয়েছে মাত্র ২০০ টাকা, তাতে রিকশার ভাড়াটাও ওঠেনি। এখন কী করব বুঝতেছি না, মাথায় হাত দিয়ে ঘরে ফিরতাম লাগবে।”

পিরোজপুর থেকে কাজের খোঁজে আসা দিনমজুর আবুল হোসেন জানান, “সকাল থেকে বাসস্ট্যান্ডে বসে ছিলাম, কাজের অপেক্ষায়। কিন্তু সারাদিনে একটাও কাজ পাইনি। বাড়িতে টাকা পাঠাতে হতো, পারিনি। কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টির কারণে কোনো কাজ জোটে না। যা টাকা ছিল, তা দিয়ে এক বেলা খেয়েছি—এখন কী করব বুঝতেছি না।”

বগুড়া থেকে আসা আরেক দিনমজুর ইদ্রিস আলী বলেন, “বৃষ্টি হলে কামকাজ থেমে যায়, কিন্তু আমাদের পেট তো থামে না। দুই দিন ধরে বৃষ্টির কারণে বসে আছি। বউয়ের ওষুধ কিনতে টাকা লাগবে, ধার করে টাকা পাঠাতে হবে, উপায় নাই।”

ভ্যানচালক দ্বীন ইসলাম বলেন, “বৃষ্টির দিনে সাধারণত ভাড়া কম হয়, তবুও রাস্তায় থাকি যদি একটা ভাড়া পাই। কিছু কামাই হলে অন্তত ভালো-মন্দ কিছু খাওয়া যায়।”

এদিকে, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং কর্মকর্তা মিঠুন জানান, “মধ্যবিত্তদের কোনো ছুটি নেই। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই কাজ করতে হয়। আজকেও বাইকে ভিজে ৩০ কিলোমিটার ঘুরে কাজ করেছি।”

অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হলেও সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের জীবনে। যাদের জীবিকা নির্ভর করে প্রতিদিনের আয়-রোজগারের উপর, তাদের জন্য বৃষ্টি মানেই অনিশ্চয়তা আর অভাবের নতুন গল্প।

শহীদ

×