
ছবিঃ সংগৃহীত
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজমান থাকায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চাঁদপুরের জনজীবন।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ভোর থেকে থেমে থেমে কখনো হালকা, কখনো মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর আগের রাতেও চলেছে একটানা বৃষ্টিপাত। এতে পৌরবাসী থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষসহ— সবাই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, আগামী দুই দিনেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
সকালে অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। রাস্তায় গণপরিবহন ছিল কম, আর ভাড়াও ছিল বেশি। রিকশা বা মোটরসাইকেল যারা ব্যবহার করেছেন, তাদের ছিল সীমাহীন দুর্ভোগ।
ভ্যানচালক কলিমউদ্দিন বলেন, ‘পেটের দায়ে বৃষ্টিতে ভিজেই ভ্যান নিয়ে বের হয়েছি। ভাড়া একটু বেশি চাচ্ছি, কিন্তু রাস্তার অনেক জায়গায় পানি। ব্যাটারি নষ্ট হলে তো সব শেষ।’
অফিসগামী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রেইনকোট পরে বের হয়েছি ঠিকই, কিন্তু কিছুই কাজে আসেনি। ভিতরের সব কাপড় ভিজে গেছে, এখন যে কি করবো ভেবেই পাচ্ছি না।’
হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘গতকাল বেচাকেনা হয়নি। আজকে তো ভোর থেকেই বৃষ্টি। দোকান খুলব কি না বুঝতে পারছি না। শুনেছি আরও দুদিন এমন বৃষ্টি থাকবে। ব্যবসা তো দূরের কথা, কর্মচারীদের বেতন, দোকান খরচ তুলতেই কষ্ট হবে।’
শহরের জোর পুকুর পাড়ের চা বিক্রেতা বিশু নাগ বলেন, ‘গত দুই দিন যাবৎ বৃষ্টির কারণে বেচাবিক্রি নাই বললেই চলে। আগে ২০০ থেকে ২৫০ কাপ চা বেচতাম, বৃষ্টির কারণে মানুষজন ঘর থিকা নামেই না। এখন ৩০ থেকে ৪০ কাপ চা বিক্রি করি। কেমনে যে বউ পোলাপাইন লইয়া সংসার চালামু ভাবতেই পারতাছি না।’
এদিকে গত দুই দিন যাবৎ বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে চাঁদপুর শহরের হকার্স মার্কেট, ছায়াবানী, নাজিরপাড়া, ষোলঘর, বাসস্ট্যান্ড এলাকা, ওয়ারলেস, মাদ্রাসা রোড, প্রতাপ সাহা রোড, কালীবাড়িসহ প্রধান প্রধান সড়ক, মার্কেট ও বিপণিবিতান এলাকা। জলাবদ্ধতার কারণে কিছু সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। অনেক যানবাহন বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
জেলা আবহাওয়া বিষয়ক কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ শোয়েব জানিয়েছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় চাঁদপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নদীতীরবর্তী ও পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে মাঝারি ধরনের বন্যা দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে তিনি আরও জানান, মৌসুমি বায়ু প্রবাহমান থাকার কারণে আগামী ৪/৫ দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
ইমরান