
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবল সংকটের কারণে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেরাই রুগ্ন হয়ে পড়েছে। এতে করে সুচিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলা লাখো মানুষ। চিকিৎসা না পেয়ে রোগীরা শহরমুখি হচ্ছেন। আর দুস্থ, গরিব ও অসহায় রোগীরা অর্থাভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে ঘরে শুয়ে ধুকে ধুকে মরছেন।
প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সেবা নিতে আসেন। জনবল সংকটে তাদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও এক পৌর এলাকার ৪ লক্ষাধিক মানুষের উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৬৭ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মিত হয়। ১৯৭২ সালে ৩১ শয্যা চালু করা হয়। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য তৎকালীন মন্ত্রী জননেতা কে এম ওবায়দুর রহমান (এম,পি) ২০০৬ সালে এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করেন। নির্মাণ করা হয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক। শয্যা সংখ্যা বাড়লেও দীর্ঘদিনের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেবার মানের কোন উন্নতি হয় নাই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য মেডিকেল অফিসারের পদ কাগজে কলমের ২৪টি থাকলেও বর্তমান রয়েছে মাত্র ৮জন। এরমধ্যে গাইনী ও শিশু ডক্টর নুসরাত জাহান সাথী, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও ডাক্তার আহাম্মদ হোসেন,নিউরো সাইন্স হাসপাতালে সংযুক্ত রয়েছেন। ফলে ৬ চিকিৎসক দিয়ে চলছে উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের সেবা কার্যক্রম। এছাড়া কনসালটেন্টের ১১টি পদ থাকলেও কর্মরত ও মাত্র ১জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জয়দেব কুমার সরকার জানান, হাসপাতালটিতে মোট ১৫৩টি। এরমধ্যে শূন্য ৭৯টি। চিকিৎসক ও নার্স সংকটের পাশাপাশি রয়েছে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সংকট। দ্বিতীয় শ্রেণীর ৩৭ টি পদের মধ্যে আছে ২৯ টি, তৃতীয় শ্রেণীর ৬৭ পদের মধ্যে ৩৫ টি ও চতুর্থ শ্রেণীর ২৩টি পদের মধ্যে ৭জন কর্মরত আছে। প্রধান সহকারী, প্রধান সরকারি কাম হিসাব রক্ষক, পরিসংখ্যানবিদ, আয়া,ওয়ার্ডবয়,জুনিয়র মেকানিক, মালি, সুইপার/ ক্লিনার,সাকামো,সিকিউরিটি গার্ড,কম্পাউন্ডার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট(ফিজিও:) এর মত গুরুত্বপূর্ণ পদে কোন জনবলই নেই।
জরুরী বিভাগের জন্য ডেডিকেটেড বিল্ডিং না থাকায় জরুরি সেবা প্রধান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কক্ষ সংকটে চিকিৎসকদের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষ বরাদ্দ হচ্ছে না। একই কক্ষে বসে একাধিক চিকিৎসক সেবা দেওয়ায় নির্দিষ্ট চিকিৎসক সনাক্তকরণে রোগীরা বিভ্রান্তিতে পড়ছেন।
এছাড়া গাইনি ও এনেসথেসিয়া চিকিৎসক অভাব, অপারেশন থিয়েটার এবং পোস্ট অপারেটিভ রুম প্রস্তুত না হওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সিজারিয়ান সহ অন্যান্য অপারেশনের ক্ষেত্রে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলার বাসিন্দা সাগর মাতব্বর সম্প্রতি জানান, তার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়েছে বন্ধন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। স্বল্প আর মানুষ, অথচ খরচ করতে হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অপারেশনের ব্যবস্থা থাকলে কোন খরচ হতো না। টেকনিশিয়ানের অভাবে এক্সরে, ইসিজি, এনেসথেসিয়া মেশিন চালু করা যাচ্ছে না। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।
এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য নেই জেনেটার। লোডশেডিং হলে ভর্তিকৃত রোগীরা পড়েন বিপাকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জয়দেব কুমার সরকার বলেন, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি উদ্ধতন নিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে জনবল কম হলেও আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন, ডাক্তার মাহমুদুল হাসান বলেন, ডাক্তার সংকট আছে, এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, তবে ৫ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিলে, এ সমস্যা থাকবে না।
নোভা