ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

নীলফামারীতে পদযাত্রায় নাহিদ ইসলাম

মুজিববাদী সংবিধান ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ৩ জুলাই ২০২৫

মুজিববাদী সংবিধান ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে

জুলাই পদযাত্রার তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার পঞ্চগড়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ব্রিটিশদের বিপক্ষে নীল বিদ্রোহ আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী। তাই জাতীয় নাগরিক পার্টি উত্তরাঞ্চল রংপুর থেকে পদযাত্রা শুরু করেছে। পদযাত্রায় দেশের ৬৪ জেলার জনগণের দুঃখ-দুর্দশা শুনে আগামী ৩ আগস্ট এনসিপি ঢাকায় শহীদ মিনারে বিশাল জনসভার মাধ্যমে ইশতেহার ও ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে।

তিনি আরও বলেন, যারা গণহত্যা সংঘটিত করেছে এবং বাংলাদেশের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ চাপিয়ে দিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশের পুরনো যে সংবিধান এই মুজিববাদী সংবিধান ফেলে দিয়ে নতুন এক সংবিধান প্রণয়ন করতে গণপরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করার দাবি তোলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, খুনি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না শেখ হাসিনার বিচার হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের মানুষ শান্ত থাকবে না। এ সময় নাহিদ তার পাশে নীলফামারীর সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শহীদ রুবেল হোসেনের বাবার হাত ধরে বক্তব্য রাখছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় জুলাই পদযাত্রার তৃতীয় দিন নীলফামারী জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, রংপুরের কৃষক সন্তান আবু সাঈদ, নীলফামারীর সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রুবেল ইসলাম ও সৈয়দপুরের সাজ্জাদ হোসেনের বিদ্রোহ আমরা মনে রেখেছি। তারা নিজেদের বুকে বুলেট নিয়ে জীবন দিয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে। আমরা সেই ইতিহাসকে বুকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি। 
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিচার এখনো সম্পন্ন না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। আমরা এখনো বিচার সম্পন্ন দেখতে পাইনি। দেখা যাচ্ছে আগের মতোই চাঁদাবাজি, দুর্নীতি চলছে। কেউ কেউ নির্বাচন নির্বাচন স্লোগান তুলে যাচ্ছে। এটি সংস্কার ছাড়া হতে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন, এটা সরকার পতনের আন্দোলন ছিল কেবল। আমরা মনে করি, এটা কেবল সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না। এটি ছিল নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। একটি দল পরিবর্তন বা ক্ষমতার হস্তান্তরের জন্যই গণঅভ্যুত্থান ঘটেনি। 
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, স্পষ্টভাবে আমরা হুঁশিয়ারি দিতে চাই, যদি সরকার বা অন্য কেউ মনে করে থাকেন যারা রাজপথে নেমেছিলেন তারা ঘরে ফিরে গেছেন, তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। আমরা বাংলার প্রতিটি পথে-প্রান্তরে যাব। আমরা বাংলার ছাত্র-জনতা, তরুণদের আবারও রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাব। 
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় পথসভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আবু সায়েদ লিওন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম-সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। 
এর আগে জুলাই পদযাত্রার তৃতীয় দিন দুপুর ১২টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার হাতীখানা কবরস্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ সাজ্জাদ হোসেনের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়। কবর জিয়ারতে দোয়া পাঠ করেন শহীদ সাজ্জাদ হোসেনের বাবা আলমগীর হোসেন। 
সাজ্জাদ নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়া মহল্লার আলমগীর হোসেন ও সাহিদা বেগম দম্পতির ছেলে। ঢাকার সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করতেন একটি পোশাক কারখানায়।

×