
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ
স্বামী কে বাঁচাতে গিয়ে নিজের ইজ্জত রক্ষা করতে পারে নি স্ত্রী। পা ধরে ভাই বলে ছোট বোনের আকুতি জানিয়ে ছেড়ে দেয়ার জন্য আকুতি মিনতি করেও রক্ষা পায় নি ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার এক গৃহবধূ। নরপশুরা মুখ চেপে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। লোক লজ্জায় নির্যাতনের শিকার ওই নারী আত্মহত্যা করতে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধার করে তাকে সোমবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করেছে ।এ ঘটনায় সোমবার সাতজনের নাম উল্লেখ করে তজুমদ্দিন থানায় বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর স্বামী। এদিকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এক জনকে গ্ৰেপ্তার করেছে। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে অভিযুক্ত মূলহোতা মামলার আসামিরা গা ডাকা দেয়। এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের দাবী তাদের উপর যে বর্বর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তা যেন আর বাংলার মাটিতে না হয়। তাই দ্রুত এর বিচারের দাবী জানান।
স্থানীয়রা জানান, ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর স্বামী তজুমদ্দিন উপজেলার একটি ইউনিয়নের বাসিন্দা। তবে তিনি ঢাকায় থাকেন। তিনি চার বিয়ে করেছেন। এর মধ্যে বর্তমানে ৩ বউ রয়েছে। ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি বলেন, ১৪-১৫ দিন আগে তিনি ঢাকা থেকে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার বাড়িতে আসেন। পরে গত শনিবার তৃতীয় স্ত্রী তাঁকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। অভিযোগ রয়েছে সেখানে রাতের বেলা শ্রমিক দল, যুবদল কয়েক জনসহ ছয়-সাত জনের একটি সন্ত্রাসী দল ঘরের ভেতর ঢুকে তাকে মারধর শুরু করে। দ্বিতীয় স্ত্রী সংসার করবেন না উল্লেখ করে তাঁরা পাঁচ লাখ টাকা দিতে চাপ দেন। তবে তিনি এত টাকা দিতে পারবেন না জানালে আবার রড দিয়ে রানের ওপর, হাতে-পিঠে মারতে থাকেন। তাঁকে অন্য একটি ঘরে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করেন।
খবর পেয়ে রবিবার সকালে তাঁর প্রথম স্ত্রী ঘটনাস্থলে আসেন। প্রথম স্ত্রীকে দেখে আবারও রড-হাতুড়ি দিয়ে তাঁকে বেধড়ক পেটানো শুরু করেন। এ সময় প্রথম স্ত্রী হামলাকারীদের হাত-পা ধরে স্বামীকে ছেড়ে দিতে বলেন। একপর্যায়ে তাঁরা পাঁচ লাখ টাকার বদলে এক লাখ টাকা দিতে বলেন। তখন প্রথম স্ত্রী তাঁর শ্বশুরকে ফোন করে টাকার জন্য বলেন। টাকা আসছে শুনে-হামলাকারীরা প্রথম স্ত্রীকে ঘরে রেখে স্বামীকে দোকানে চা খাওয়ার কথা বলে বাইরে নিয়ে যান।
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, তাঁর স্বামীকে বের করে নিয়ে যাওযার পর নরপশুরা ঘরের দরজা-জানালা আটকে তাঁকে একের পর এক দলবেঁধে ধর্ষণ করেন। তিনি চিৎকার করলে আশপাশের বাড়ির নারীরা দরজা-জানালা খুলতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁকে রক্ষা করতে পারেননি।
ভুক্তভোগী দম্পতি বলেন, সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা কাউকে না বলার শর্তে তাঁদের ছেড়ে দেন। এর পর থেকে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূ গ্রামে ফিরে দুই বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এদিকে ঘটনাটি পুলিশ কে না জানানোর জন্য ধামাচাপা দেয়ার জন্য সন্ত্রাসীরা তাদের নানা ধরনের হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। অবশেষে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর স্বামী ৯৯৯ ফোন দিয়ে পুলিশে খবর দেন। সোমবার পুলিশ এসে তাঁদের অভিযোগপত্র গ্রহণ করে।
এদিকে সোমবার রাতে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর মেডিকেল পরীক্ষা শেষে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে হাসপাতালের গাইনি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। এসময় তিনি অভিযুক্ত আসামিদের শাস্তি দাবি করেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধান আসামি উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন ও যুবদল কর্মী মো. আলাউদ্দিন গা ঢাকা দেন। তাঁদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তবে তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ওমর আসাদ রিন্টু জানান, বিএনপির অঙ্গসংগঠনের কেউ এ ঘটনায় জড়িত থাকলে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মহব্বত খান জানান, সোমবার ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাদীর হয়ে তজুমদ্দিন থানায় একটি নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করেন। মামলায় ফরিদ ও আলাউদ্দিনসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ঝড়না বেগম নামে তৃতীয় স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত করে মূল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
নোভা