
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে একসময় যে প্রত্যাশার জোয়ার বইছিল, বর্তমানে তা রূপ নিয়েছে অনিশ্চয়তার স্রোতে। পাঁচ বছর আগে বড় আশাবাদের মধ্য দিয়ে যে প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল, তা এখনো জমি জরিপের পর্যায়েই সীমাবদ্ধ। দৃশ্যমান অগ্রগতির অভাবে প্রশ্ন উঠেছে এই অঞ্চল আদৌ বাস্তবে রূপ নেবে তো?
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা। দেবীগঞ্জ সদর, দেবীডুবা ও সোনাহার ইউনিয়নের ৬০২.৪২ একর জমির ওপর ৩.৩৫ কিলোমিটার এলাকায় গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল অর্থনৈতিক অঞ্চলটি। সে সময় জানানো হয়েছিল, এই অঞ্চলের বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২০-৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বদলে যাবে পুরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র।
তবে গত পাঁচ বছরে বাস্তবায়নের জায়গায় এসে দেখা দিয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। নির্ধারিত জমির পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়েছে ২৫০.৮৫ একরে, যার মধ্যে খাস জমি ২১৭ একর এবং বাকি অংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন ও বন্দোবস্তপ্রাপ্ত। ভূমি অফিসের বরাতে জানা গেছে, বেজার অনুকূলে এখন পর্যন্ত ১৮৫.৮৬ একর জমি বন্দোবস্ত হয়েছে। অবশিষ্ট ৬৪.৯১ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
২০২৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন প্রকল্প এলাকার সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরবর্তী সময়ে দেবীগঞ্জের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম রব্বানী সরদার জমির সর্বশেষ অবস্থা ও অধিগ্রহণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে জমি অধিগ্রহণে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, পুনর্বাসনের সম্ভাব্য ব্যয় ও স্থানীয় বিরোধিতার কারণে প্রকল্পের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে দারারহাট আবাসন প্রকল্পের দুই শতাধিক পরিবার। শুরুতে তাদের পুনর্বাসনের কথা থাকলেও পরবর্তীতে তাদের আপত্তি ও পুনর্বাসনের ব্যয় বিবেচনায় সে পরিকল্পনা থমকে গেছে। এসব পরিবারের দাবি, তারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছেন এবং অনুর্বর বালুময় জমিকে পরিশ্রম করে আবাদযোগ্য করেছেন। তারা অন্যত্র যেতে নারাজ।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, "অর্থনৈতিক অঞ্চল হোক, আমরাও চাই উন্নয়ন। কিন্তু আমাদের যেন অন্য কোথাও সরিয়ে না দেওয়া হয়। আমরা বহু বছর ধরে এখানে বসবাস করছি, নিজের হাতে গড়া আবাদি জমি ছেড়ে যেতে পারবো না।"
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন গণমাধ্যমকে বলেন, "আমরা এখনো এই প্রকল্প নিয়ে আশাবাদী। সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটি সম্পন্ন হলেই পরবর্তী ধাপে কাজ শুরু হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী। যেহেতু এই অঞ্চল কৃষিনির্ভর, তাই এখানে এগ্রি-বেইজড অর্থনৈতিক অঞ্চলই হতে পারে উপযুক্ত।"
তবে কবে নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তব রূপ পাবে, সে প্রশ্নে নিশ্চিত কিছু বলতে পারেননি তিনি।
দেবীগঞ্জের অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে সরকার ও বেজা কর্তৃপক্ষের তরফে আশাবাদী বার্তা এলেও বাস্তবায়নের গতি ও মাঠপর্যায়ের জটিলতা সে আশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। স্থানীয়দের স্বার্থরক্ষা ও কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে এ অঞ্চলের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়াই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
মিমিয়া