ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

গরম ও বিদ্যুৎ সংকটে ধ্বংসের মুখে মুরগি খামারিরা

গিয়াস উদ্দিন ফরহাদ, নোয়াখালী

প্রকাশিত: ১৭:৪৯, ১৪ জুন ২০২৫

গরম ও বিদ্যুৎ সংকটে ধ্বংসের মুখে মুরগি খামারিরা

ছবি: জনকন্ঠ

ঈদ পরবর্তী অব্যাহত লোডশেডিংয়ে গরমে পোলট্রি ব্যবসায় ধস নেমেছে পুরো জেলাজুড়ে। তীব্র গরমে মুরগিগুলো হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। জেলায় অব্যাহত প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে চলছে অসহনীয় বিদ্যুৎ সংকট। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন জেলার মুরগি খামারিরা। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন খামারে কয়েক হাজার মুরগি মারা গেছে। এ ছাড়া ডিম উৎপাদনেও গরমের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে খামারিদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মুরগির মাংস ও ডিমের সরবরাহ কমে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পোলট্রি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে নোয়াখালীতে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। এর মধ্যে জেলার ৯টি উপজেলায় ঈদের আগের দিন থেকে শুরু হয় তীব্র লোডশেডিং। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো কোনো উপজেলায় মাত্র ৫–৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। কখনো কখনো টানা ৮–৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। বৃষ্টি বা ঝোড়ো বাতাস হলে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎহীন থাকতে হয় এলাকাবাসীকে।

কোম্পানীগঞ্জের মুসাপুর এলাকার নিহা পোলট্রি খামারের কর্তাধারী মোহাম্মদ নূর উদ্দিন জানান, তাঁর মুরগির শেডে ঈদের পূর্বদিন থেকে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে প্রচণ্ড গরমে প্রায় ১ হাজার ব্রয়লার মুরগি ও ২ হাজারের বেশি লেয়ার মুরগি মারা গেছে। মৃত মুরগিগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহা উপলক্ষে এমনিতেই বাজার মন্দা, তার ওপর লোডশেডিং ও তাপদাহের কারণে আমাদের ব্যবসায় বিপর্যয় নেমে এসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ঈদের আগের দিন থেকে পরবর্তী তিন-চার দিন বিদ্যুৎ প্রায় ছিল না। গত সপ্তাহে কিছুটা লোডশেডিং কমলেও শুক্রবার থেকে তা আবারও বেড়ে গেছে। সকাল ৭টার পর বিদ্যুৎ চলে যায়, দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য ফিরে এলেও দ্রুত আবার চলে যায়। বিকেলেও বিদ্যুৎ থাকে না। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান মেলেনি। গত এক সপ্তাহে তাঁর খামারে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কোনো সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

চরমটুয়া ইউনিয়নের খামারি খোকন আহমেদ বলেন, ‘বিদ্যুতের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আমরা আগে কখনও দেখিনি। মুরগির শেডে সার্বক্ষণিক ফ্যান চালিয়ে রাখতে হয়, কিছুক্ষণ পরপর পানি ছিটিয়ে পরিবেশ ঠান্ডা রাখতে হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্যান বন্ধ, পানি দেওয়া যাচ্ছে না। এতে গত সপ্তাহে ১ হাজার ব্রয়লার মুরগি মারা গেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা।’

তিনি আরও জানান, অতিরিক্ত গরমের কারণে মুরগির ডিমের আকার ছোট হয়ে গেছে, ফলে আগের মতো দামও পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় খামার চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

আরেক খামার পরিচালক মো. আরিফ বলেন, ‘কয়েক মাস আগে রোগে কিছু মুরগি মারা যায়, এখন গরমে আরও ১ হাজার মুরগি মারা গেছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০–৩৫টি মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। শেডে পানি দিয়ে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু তা পুরোদিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কখন ঠিক হবে, সেটিও অনিশ্চিত।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে কিছু খামারে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত খামারিদের পক্ষ থেকে বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। উপজেলা কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।’

নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ সরওয়ার জাহান বলেন, ‘জেলায় বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ গ্রাহক রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ কবে স্বাভাবিক হবে, সে বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তা চেয়েছি।’

শহীদ

×