ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চুরির অভিযোগে নারীকে গাছে বেঁধে মারধর, চুল কেটে দেওয়া ও লুটপাটের অভিযোগ

সাগর হোসেন, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ১০ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৮:৪৯, ১০ জুন ২০২৫

চুরির অভিযোগে নারীকে গাছে বেঁধে মারধর, চুল কেটে দেওয়া ও লুটপাটের অভিযোগ

ছবিঃ সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে মাংস চুরির অভিযোগে রিনা খাতুন (৪০) নামে এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর ও মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৯ জুন) রাত ৮টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় রিনার বাড়িতে ভাঙচুর এবং গরু-ছাগল ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের অভিযোগও উঠেছে।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক শত মানুষ রিনাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, কেউ তার মাথার ওড়না খুলে দিচ্ছে, কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছে। রাত ১০টার দিকে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। বর্তমানে রিনা খাতুন কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে রিনা প্রতিবেশী রিপন আলীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস চুরি করছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ সময় রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এবং বাড়ির উঠানে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। এরপর রিনার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।

তবে রাত ৮টার দিকে স্থানীয় কয়েক শত নারী-পুরুষ রিনার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং তাকে তুলে নিয়ে ফের রিপনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে ব্যাপক মারধরের পাশাপাশি তার মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। পরে শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. শাহ আলমের উপস্থিতিতে একটি সালিশ বসে। সালিশে রিনার দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালঙ্কারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছে রিনার পরিবার।

মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ভুক্তভোগী রিনা খাতুন। তিনি জানান, “আমি রিপনকে ডেকেছিলাম কাজের জন্য। তখন তার স্ত্রী মুক্তি মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে আমাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে। পরে রাত ৮টার দিকে গ্রামের লোকজন আমাকে তুলে নিয়ে গাছে বেঁধে মারধর করে। আমার চুল কেটে দেয় মুক্তি ও পারভিন। আমার ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে গরু, ছাগল ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে গেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রিপনের বক্তব্য, রিনা আমাদের ঘর থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এলাকার আরও কয়েকটি বাড়িতে সে চুরি করেছে বলেও অভিযোগ আছে।
রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন বলেন, “আমি শুধু দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছিলাম ও একটা চর মেরেছি। তবে চুল কে কেটেছে, তা জানি না।”
অভিযুক্ত কাশেম বলেন, “রিনা বিভিন্ন জায়গায় চুরি করেছে। তাই ক্ষতিপূরণ হিসেবে সালিশে গরু-ছাগল নেওয়া হয়েছে।”

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় মেম্বার মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, “আমি শুধু রিনাকে তার স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত হয়নি।”

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, কিন্তু ভুক্তভোগী ও তার স্বজনদের পাওয়া যায়নি। বর্তমানে রিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
 

মারিয়া

×