
ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে গরম উপেক্ষা করে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে পর্যটকদের ভিড়।
ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে তাপদাহ উপেক্ষা করেও দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে শেরপুরের গারো পাহাড়ি এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। মঙ্গলবার পর্যন্ত ঈদের তিনদিন পরও গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশ এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কে দর্শনার্থীদের পদচারণায় ওই মুখর অবস্থা দেখা গেছে। পাহাড়ের সবুজ গাছগাছালি আর মায়াময় ছায়ার পাশাপাশি নান্দনিক স্থাপনা ও রাইডে দর্শনার্থীদের মাতামাতি এক ভিন্ন আবহের সৃষ্টি করেছে। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঈদ আনন্দ উদ্যাপনে। ফলে প্রচণ্ড গরম ও তপ্ত রোদও পর্যটকদের ওই আনন্দ উদ্যাপনে বাধা হতে পারেনি।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ঈদের চতুর্থ দিনে গজনী অবকাশকেন্দ্র হয়ে ওঠেছে ভ্রমণপিপাসুদের মিলনমেলা। ঈদের দিন বিকেল থেকেই ওই কেন্দ্রে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। গরম ও রোদ উপেক্ষা করে দর্শনার্থীরা গজনীতে ঘুরছেন। বিশেষ করে তরুণদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া শিশুদের জন্য নির্মিত চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্কে শিশুরা আনন্দে মেতে ওঠেছে। পিছিয়ে নেই অভিভাবকরাও। ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তারাও অংশ নেন।গজনী অবকাশকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হয় এ পর্যটনকেন্দ্রের যাত্রা। শেরপুর শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের প্রায় ৯০ একর পাহাড়ি এলাকাজুড়ে এর অবস্থান। অবকাশকেন্দ্রটি জুড়ে লাল মাটির উঁচু-নিচু পাহাড়, টিলা, ঝরনা ও গহিন বন। পাহাড়ি ঝরনা ও লেকের সঙ্গে নানা কৃত্রিম স্থাপনা ও ভাস্কর্যের উপস্থিতি, জলপরী, ডাইনোসর, ড্রাগন টানেল, পদ্ম সিঁড়ি, স্মৃতিসৌধ, গারো মা ভিলেজ ও রংধনু ব্রিজ। শিশুদের জন্য আছে চুকুলুপি পার্ক, এক্সপ্রেস ট্রেন, সুপার চেয়ার ও নাগরদোলার মতো রাইড। পর্যটকদের জন্য ওয়াকওয়ে, কেব্ল কার, জিপ লাইনিংয়ের মতো আধুনিক বিনোদনের সুযোগ রাখা হয়েছে এতে। শেরপুর জেলা ব্র্যান্ডিং কর্নারে তুলে ধরা হয়েছে জেলার ঐতিহ্য ও বিখ্যাত তুলসীমালা চাল। কেন্দ্রটির অন্যতম আকর্ষণ ৮০ বর্গফুট উঁচু টাওয়ার, সেখান থেকে দেখা যায় পুরো গজনীর অপূর্ব দৃশ্য। গজনী অবকাশকেন্দ্রে জনপ্রতি প্রবেশ ফি ২০ টাকা। ওয়াচ টাওয়ারের টিকিট মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। বাস ও ট্রাকের পার্কিংয়ের জন্য ৭০০ টাকা, মিনিবাস ও মিনিট্রাক ৫০০ টাকা, মাইক্রোবাস ৩০০, প্রাইভেট কার ২০০ টাকা। এ ছাড়া পার্ক এবং বিভিন্ন রাইডে চড়তে রাইড ভেদে ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ফি দিতে হয়।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে কথা হয় শেরপুর সদরের গৃহিণী লাকী আক্তারের সাথে। তিনি জানান, ঈদের ছুটি পেয়ে আমরা স্ব-পরিবারে গজনী অবকাশে ঘুরতে এসেছি। রোদ ও গরম অনেক বেশি। তবে ছেলে-মেয়েদের আনন্দের কোনো কমতি নেই। পার্শ্ববর্তী জামালপুর থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসা মুসলিম উদ্দিন বলেন, প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ছুটি পেলেই এখানে ঘুরতে আসেন তিনি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অবকাশকেন্দ্রের ইজারাদার ফরিদ আহমেদ জানান, এবার ঈদে দীর্ঘ ছুটির কারণে ৩দিন পরও দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে আছে। আশা করছি ছুটির শেষ দিন পর্যন্ত এই ভিড় লেগে থাকবে।
এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় আছে বলে জানান ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আল-আমীন। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে গজনী অবকাশকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে, তাই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে।
এদিকে গজনী অবকাশের তুলনায় ভিড় কিছুটা কম হলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মধুটিলা ইকোপার্কেও পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি মধুটিলা ইকোপার্কের শাল-গজারি আর নানা প্রজাতির গাছগাছালি ঘেরা উঁচু-নিচু টিলা ও পাহাড় ভ্রমণ পিপাসুদের মন সহজেই কেড়ে নিচ্ছে। নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ি এলাকায় ৩৮৩ একর আয়তনের এ বনকে ১৯৯৯ সালে ইকোপার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মধুটিলা ইকোপার্কের উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলা ও ছোট ছোট ঝরনার বয়ে যাওয়া পানির কলকল শব্দ দর্শনার্থীদের মন কাড়ছে। এখানে রয়েছে পাহাড়ি টিলার ওপর শত শত বছর ধরে বসবাসকারী নৃ-ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর নানা সম্প্রদায়দের লোকদের সংস্কৃতি ও জীবন-জীবিকা। তবে মধুটিলা ইকোপার্কে প্রবেশ টিকেটের মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা এবং ওয়াচ টাওয়ারসহ বিভিন্ন রাইডের টিকেট মূল্য ২০ টাকা ১০০ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে।
এছাড়া গারো পাহাড়ের রাজার পাহাড়, পানিহাতা তারানি, বারোমারী মিশন, নাকুগাঁও স্থলবন্দরসহ ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে ওঠা অর্কিড ও গোল্ডেন ভ্যালিতেও ঈদের দীর্ঘ ছুটির সুবাদে গরম উপেক্ষা করে দর্শনার্থীদের ভিড় চলছে।
রাজু