
সরকারি সহায়তার আশায় না থেকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নে স্বেচ্ছাশ্রমে ৬টি কাঠের সেতু তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সামাজিক সংগঠন ‘এসি আকরাম ফাউন্ডেশন’-এর যুবকরা। এর ফলে আসন্ন বর্ষায় ওই ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি লাঘব হবে।
সেতুগুলো নির্মিত হয়েছে: দক্ষিণ হুগড়া, গায়েনপাড়া, হুগড়া পুরাতন জামে মসজিদ, উত্তর হুগড়া ডাক্তারবাড়ি, মন্ডল মোড়ের উত্তরে রহিমের বাড়ি সংলগ্ন এবং পূর্ব চিনাখালির গেদা গায়েনের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায়। প্রতিটি সেতুর গড় দৈর্ঘ্য ১১০ ফুট এবং প্রস্থ ৭ ফুট। এসব সেতু দিয়ে অনায়াসে একটি ভ্যান মালামাল বা যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। সেতু তৈরিতে ইট-সিমেন্ট-রডের পিলার বা খুঁটি, লোহার অ্যাঙ্গেল এবং কাঠের ফালি বা মোটা তক্তা ব্যবহার করা হয়েছে।
স্বেচ্ছাশ্রমে নিয়োজিতদের মধ্যে রয়েছেন হুগড়া ইউনিয়নের রিপন মন্ডল, সোলাইমান, কবির, মাসুম, সিয়াম চাকলাদার, রউফ, ইমরান মন্ডল, আমির মন্ডল, আলিম মন্ডল, খোকা, মুকুল, রফিকুল বেপারি, আকালু চাকলাদার, লতিফসহ আরও অনেকে। তারা প্রতিদিন সময় বের করে স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় আরও বহু যুবক এ কাজে সম্পৃক্ত।
স্থানীয়রা জানান, এলাকার ছোট-বড় খালে সাঁকো বা সেতু না থাকায় প্রতি বর্ষায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুফল মেলেনি। ফলে যুবকরাই এই দুর্ভোগ লাঘবে নিজেরা উদ্যোগ নেন। এটি যুব সমাজের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। যদিও সেতু তৈরিতে কাঠ, লোহা, পিলার, অ্যাঙ্গেলসহ সব উপকরণ সরবরাহ করেছে স্থানীয় সেবামূলক সংগঠন ‘এসি আকরাম ফাউন্ডেশন’।
এলাকাবাসী জানান, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মধ্যে হুগড়া ইউনিয়ন চরাঞ্চলভুক্ত এবং সবচেয়ে অবহেলিত। প্রতিবছর বর্ষা এলেই এখানকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বর্ষার আগেই এমন এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে কাঠের সেতু নির্মাণ করছেন যুবকরা। ছাত্র, দিনমজুরসহ স্থানীয় অনেকেই এই স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নিচ্ছেন।
তারা আরও জানান, সেতু নির্মাণের পূর্বে কয়েকজন বয়সী যুবক পুরো ইউনিয়ন ঘুরে দুর্ভোগপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করেন। এরপর এসি আকরাম ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের আবেদন করেন। শুধু সেতু নয়—যেখানে যা প্রয়োজন, সেখানেই কাজ করার মানসিক প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। যেমন বর্ষায় নষ্ট হওয়া রাস্তা মাটি দিয়ে ভরাট, ফসল পানিতে ভিজে গেলে সহায়তা, অথবা ফসল বানের পানিতে ডুবে যাওয়ার আগেই উদ্ধার প্রভৃতি।
তারা জানান, সরকারি প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতার অপেক্ষা না করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে ও এসি আকরাম ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এসব সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। তারা সরকারের কাছে হুগড়া ইউনিয়নের উন্নয়ন কার্যক্রমের স্থায়ী রূপ দেওয়ার দাবি জানান।
হুগড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরী-ই-আলম তুহিন বলেন, তার ইউনিয়নটি যমুনা নদীতীরবর্তী এবং এখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। পূর্বে এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল নদীভাঙন, যা এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবুও বর্ষায় পানিবন্দি হওয়ার সমস্যা রয়ে গেছে। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে ছোট-বড় কাঠের সেতু তৈরি করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, ‘এসি আকরাম ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে। সংগঠনটি টিউবওয়েল স্থাপন, স্যানিটারি ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সামাজিক সেবায়ও কাজ করছে। ছাত্র ও দিনমজুরদের স্বেচ্ছাশ্রমে সংগঠনটির কার্যক্রম আরও বেগবান হয়েছে। তাদের স্বপ্রণোদিত অংশগ্রহণ সত্যিই অনুকরণীয়।
জানা যায়, দক্ষিণ হুগড়ার সেতু নির্মাণে উপকৃত হচ্ছেন মন্ডল পাড়া, বারালিপাড়া ও খান পাড়ার মানুষ। গায়েনপাড়ার সেতুতে উপকার পাচ্ছেন আনুহুলা, চিনাখালী ও ধুপলাপাড়ার মানুষ। হুগড়া পুরাতন জামে মসজিদের সেতুতে মন্ডলপাড়া, মোল্লাপাড়ার মানুষের দুর্ভোগ কমেছে। উত্তর হুগড়ার সেতু উপকারে এসেছে চরহুগড়া, উত্তর হুগড়া ও ধুলবাড়ির বাসিন্দাদের। মন্ডল মোড়ের উত্তরের সেতু কায়েম হুগড়া এবং চরহুগড়ার যোগাযোগ সহজ করেছে। আর পূর্ব চিনাখালির সেতুতে উপকার পাচ্ছেন পূর্ব চিনাখালী ও উত্তর আনুহলার মানুষ।
সজিব