
স্মার্টফোন এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। ঘুম থেকে উঠে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিদিনের নানা কাজে স্মার্টফোন যেন হাতছাড়া হয় না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অতিনির্ভরতা তরুণ প্রজন্মকে ঠেলে দিচ্ছে এক অদৃশ্য দুর্যোগের দিকে। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে মানসিক ও শারীরিক সমস্যার হার।
এক সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বসবাসকারী ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণদের ৭০ শতাংশই দিনে গড়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করছেন স্মার্টফোনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন গেম এবং ভিডিও কনটেন্টে আসক্ত হয়ে তারা হারাচ্ছেন তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব
অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যে পড়ছে ব্যাপক প্রভাব। ‘ফোমো’ বা ‘ফিয়ার অব মিসিং আউট’ অর্থাৎ কিছু মিস হয়ে যাওয়ার ভয় তাদের মধ্যে তৈরি করছে অস্থিরতা, হতাশা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব।
মনোবিজ্ঞানী ডা. মেহেরুন নেসা বলেন,
“তরুণদের মধ্যে একাকীত্ব ও বিষণ্ণতা বাড়ছে। ভার্চুয়াল বন্ধুত্বে অভ্যস্ত হয়ে পড়লেও বাস্তব জীবনে তারা নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছে না। যা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে।”
স্ক্রিনের অতিরিক্ত আলো ও রঙের প্রভাব ঘুমের ওপর ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব। ঘুম কমে যাওয়ায় বাড়ছে উদ্বেগ, ক্লান্তি ও রাগ।
শারীরিক স্বাস্থ্যেও ভয়ঙ্কর প্রভাব
শুধু মানসিক নয়, দীর্ঘক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহারে দেখা দিচ্ছে শারীরিক সমস্যাও।
ফিজিওথেরাপিস্ট রাশেদুল ইসলাম বলেন,
“অনেক তরুণ অল্প বয়সেই ঘাড়, পিঠ, চোখের সমস্যা নিয়ে আসছেন। দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে ফোন ব্যবহার করলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়, পেশিতে টান পড়ে এবং স্নায়ুতন্ত্রে চাপ পড়ে। এটা ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ বার্তা।”
কমে যাচ্ছে শারীরিক চলাচল, যা বাড়াচ্ছে স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি।
মুক্তির উপায় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে চাই সচেতনতা। সময় নির্ধারণ করে স্মার্টফোন ব্যবহার, খেলাধুলা, বই পড়া, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি সময় কাটানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
পাশাপাশি প্রযুক্তির সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন অ্যাপে নির্দিষ্ট সময় পর ফোন ব্যবহারে সতর্কবার্তা আসে। ডিজিটাল ডিটক্স—অর্থাৎ প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় স্মার্টফোন থেকে দূরে থাকার অভ্যাসও কাজে আসতে পারে।
স্মার্টফোন ব্যবহারের আসক্তি এখন তরুণদের জন্য এক নীরব হুমকি। সময় থাকতে পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। স্মার্টফোন আমাদের নিয়ন্ত্রণ না করুক, আমরাই যেন প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করি, এই সচেতনতাই হোক আজকের শপথ।
মিমিয়া