
ছবি : জনকণ্ঠ
বয়সের ভারে শরীর কিছুটা নুয়ে পড়েছে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শারীরিক অসুস্থতায় কথা বলাও কষ্টসাধ্য। বলছি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভরপাশা ইউনিয়নের কৃষ্ণকাঠি গ্রামের মৃত হরযত আলীর স্ত্রী, ৭০ বছরের বৃদ্ধা তহমিনা বেগমের কথা।
সমাজের অবহেলিত এক মায়ের করুণ চিত্র উঠে এসেছে এই গ্রামে। তহমিনা বেগম স্বামীকে হারিয়েছেন ১৫ বছর আগে। সেই থেকে দিন চলে একা, সংগ্রামে। এখন তিনি বাস করেন একটি জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে। দিনের পর দিন অনাহারে থাকতে হয় তাঁকে, কারণ তাঁর দুই সন্তানই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
স্বামী মারা যাওয়ার পর নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে সন্তানদের বড় করেছেন তিনি। তাঁদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে দিন-রাত খেটেছেন এই সংগ্রামী মা। অথচ আজ, যখন তাঁর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সন্তানদের ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সহায়তা, তখন কেউ তাঁর পাশে নেই। দুই সন্তান ঢাকায় চাকরি করে, কিন্তু নিজেদের সংসার সামলাতেই তারা ব্যস্ত, মায়ের খোঁজ নেয়ার সময় হয় না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তহমিনা বেগম বলেন, “তাদের এখন নিজের সংসার, মা কোথায় কীভাবে আছে তা ভাবার সময় নেই।”
স্বামীর রেখে যাওয়া ছোট একটি ঝুপড়িতে একাই বাস করেন তহমিনা বেগম। খাওয়ার ঠিক নেই, অনেক সময় না খেয়ে কাটে দিন। প্রতিবেশীদের দয়াতেই এখন তাঁর বেঁচে থাকা। বর্ষাকালে ঘরে পানি ঢুকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন তিনি। পলিথিন মুড়িয়ে এক কোণে কাঁপতে কাঁপতে রাত কাটে। সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তাও মেলেনি তাঁর ভাগ্যে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তহমিনা বেগম একসময় ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী ও সংগ্রামী নারী। আজ তিনি এভাবে অবহেলিত হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন—এটা কল্পনাই করা যায় না। একদিকে এক মা অনাহারে দিন কাটান, অন্যদিকে তাঁর সন্তানরা শহরে নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত।
অসহায় তহমিনা বেগম বলেন, “মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে অনেকবার গেছি, কেউ একটা চাউলের কার্ডও করে দেয়নি। সরকারি কোনো সাহায্য আমি পাইনি। শুনি সরকার অনেক সাহায্য করে। আপনারা আমার জন্য একটু সাহায্য করেন। যেন জীবনের শেষ প্রান্তে অন্তত দুই মুঠো ভাত খেয়ে মরতে পারি।”
সা/ই