ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মাদারীপুরে শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক কুম্ভমেলা,১২-১৫ লক্ষাধিক ভক্তের সমাগমের প্রত্যাশা

সুবল বিশ্বাস, নিজস্ব প্রতিবেদক, মাদারীপুর:

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ২৮ মে ২০২৫; আপডেট: ০৭:৪৯, ২৮ মে ২০২৫

মাদারীপুরে শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক কুম্ভমেলা,১২-১৫ লক্ষাধিক ভক্তের সমাগমের প্রত্যাশা

মাদারীপুরে আজ থেকে শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক কুম্ভমেলা। ৪ দিনের এই মেলায় ১২ লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটবে বলে প্রত্যাশা আয়োজকদের। এই কুম্ভমেলা বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ। জেলার রাজৈরের কদমবাড়িতে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে গণেশ পাগলের আশ্রমে কুম্ভমেলা। এবার মেলায় ১২-১৫ লক্ষাধিক ভক্ত সাধারণের আগমন ঘটবে বলে আয়োজকরা বলছেন।

মেলায় অংশগ্রহণ করবেন বাংলাদেশসহ ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা থেকে আসা সাধু-সন্ন্যাসীরাও। বিকেল থেকেই কয়েক হাজার দোকানি খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে পরসা সাজিয়ে বসে গেছেন। সুলভে এসব সামগ্রী কিনতে পারবে ক্রেতারাও। আর কেনাবেচা বাড়ায় খুশি তারা। মেলাকে ঘিরে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এই মেলাই প্রমাণ করছে বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে সকল ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাক-ঢোল, কাঁসর ঘণ্টা ও ডাঙ্কা বাজিয়ে দলে দলে গণেশ পাগলের সেবাশ্রমে আসছেন ভক্তরা। শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সমান তালে আসায় তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। কদমবাড়ির দিঘিরপাড় ৩৬৫ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে গণেশ পাগলের সেবাশ্রম। এখানে বিভিন্ন দেবদেবতার ১০৮টি মন্দির রয়েছে।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের টেকেরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে যেকোন যানবাহনে খুব সহজেই আসা যায় মেলার মাঠে। প্রায় ১২৫ বছর আগে ১৩ জন সাধু, ১৩ কেজি চাল ও ১৩ টাকা নিয়ে ১৩ই জ্যৈষ্ঠ শুরু করেন কুম্ভমেলা। এরপর গণেশ পাগলের এই মেলা দেশ ও দেশের বাইরে ব্যাপক সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া মেলা চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত। ৪ দিনের নিয়ম থাকলেও মেলা শেষ হতে ৭ দিন পার হয়ে যায়।

জানা যায়, মাদারীপুরের রাজৈরের কদমবাড়িতে শুরু হয় চারদিনের কুম্ভমেলা। পূণ্যলাভের আশায় এই মেলায় ছুটে আসেন ভক্তরা। দেশের বাইরে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাধু-সন্ন্যাসীরাও অংশ নেন এখানে। পরিণত হয় এক মিলন মেলায়। নেচে-গেয়ে সময় কাটান সবাই। দূরদূরান্তের ভক্তবৃন্দের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে। কাজ করছে কয়েকশ’ স্বেচ্ছাসেবক। সেবাশ্রমের সেবায়িতদের দাবি, মহামানব গণেশ পাগলের কাছে মানত করলে পূর্ণ হয় মনের বাসনা।

মেলায় ঘুরতে আসে দর্শনার্থী পূজা সেন বলেন, ‘আমি মা-বাবার সাথে মেলায় ঘুরতে এসেছি। আমাদের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপায়। এতো সুন্দর আর এতো বড় মেলা দেখে খুবই আনন্দ লাগছে।’ পিরোজপুরের নেছারাবাদ এলাকা থেকে আসা গৌতম সাহা বলেন, ‘প্রতিবছরই বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে এই কুম্ভমেলায় ঘুরতে আসি। এটি আমাদের কাছে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ মেলা। গণেশ পাগলের কাছে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়। তাই বেশি বেশি ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থী এখানে ছুটে আসেন।’

ঢাকার সাভার থেকে আসা ব্যবসায়ী মনোয়ার বেপারী বলেন, ‘আমি ২০-২৫ বছর যাবৎ এই কুম্ভমেলায় দোকান নিয়ে আসি। আমার পোশাকের দোকান। এখানে কয়েক লাখ টাকা ব্যবসা হয়। যা দিয়ে সারাবছর আয়ের উৎস যোগান হয়।’ আরেক ব্যবসায়ী শুভ দেবনাথ বলেন, ‘মেলায় ৫ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করে। নিরিবিলি কেনাবেচা করে আনন্দ পাই। সেইসাথে ভালো কেনাবেচা হওয়ায় দারুণ খুশি।’

গণেশ পাগল সেবাশ্রম ও মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নীল রতন সরকার বলেন, ‘এবার মেলায় ১২-১৫ লাখ মানুষের টার্গেট করা হয়েছে। আবহাওয়া ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় আগেভাগেও চলে এসেছেন অনেক ভক্তবৃন্দ। ৩৬৫ বিঘা জমির মাঠজুড়ে রাখা হয়েছে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি আর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রতিবছরই বাড়ছে মেলার পরিধি। শান্তিপূর্ণভাবে মেলা শেষ করতে সবাই আন্তরিক রয়েছে।’

মাদারীপুরের রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার ঘোষ জানান, ‘পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশনায় মেলার চারদিকে পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও। প্রায় ২শ’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। উৎসব শান্তিপূর্ণ করতে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে ও টাওয়ার নির্মাণ রয়েছে। যা থেকে মেলার মাঠ সর্বক্ষণ মনিটরিং করা হচ্ছে।’

আফরোজা

×