
ছবি: সংগৃহীত
কুড়িগ্রামে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কোকোপিটে চারা উৎপাদন। নিরাপদ ও কীটনাশকমুক্ত এসব চারা এখন জেলার চাহিদা পূরণ করে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও দেশের নানা প্রান্তে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে জেলায় সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ।
কোকোপিটে উৎপাদিত সবজি, ফল, ফুল ও মসলা জাতীয় গাছের চারা শতভাগ শেকড়যুক্ত, সুস্থ ও সবল হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে এর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। নারকেলের খোসা থেকে তৈরি প্রাকৃতিক উপাদান কোকোপিট মাটির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা মাটি অপেক্ষা বেশি পানি ধারণ করতে পারে এবং চারার দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়ক।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখন চারা উৎপাদনের পাশাপাশি সরবরাহ করা হচ্ছে বীজ, সিডলিং ট্রে, ভার্মি কম্পোস্ট, মালচিং ফিল্ম, নার্সারি পলিব্যাগসহ নানা কৃষি উপকরণ। কোকোপিট ব্যবহারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় এই চাষাবাদ পরিবেশবান্ধব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যয় কমে আসছে এবং বাড়ছে কৃষকের আয়।
বেলগাছা ইউনিয়নের কৃষক সৈয়দ আলী ও রাজেন রায় জানান, কোকোপিটের চারা কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। এতে ফলন দ্বিগুণ হয়, খরচ কমে এবং রোগবালাই কম দেখা দেয়। অপরদিকে, চাকিরপাশা ইউনিয়নের কৃষক ফুলবাবু রায় বলেন, কোকোপিটভিত্তিক চারা উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় জেলায় তৈরি হয়েছে স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ।
একাধিক নার্সারি মালিক জানান, কোকোপিটে উৎপাদিত সুস্থ ও নিরাপদ চারা অনলাইন ও অফলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে ভালো আয় করছেন তারা। এতে তরুণ উদ্যোক্তারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষিভিত্তিক ব্যবসায়।
‘কুড়িগ্রাম কৃষি প্ল্যাটফর্ম’-এর পরিচালক এইচ. এম. ইদ্রিস হুসাইন জানান, নিরাপদ উপায়ে সবজি উৎপাদনে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। জেলা কৃষি বিভাগও কৃষকদের ‘উত্তম কৃষি চর্চা’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, "কুড়িগ্রামের কৃষকরা কোকোপিট ব্যবহার করে অল্প জায়গায় অধিকসংখ্যক, নীরোগ ও শক্তিশালী চারা উৎপাদন করছেন। এসব চারা তারা অনলাইন ও অফলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করছেন। কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কৃষক, উদ্যোক্তা ও নার্সারি মালিকদের প্রশিক্ষণ ও বাজারজাতকরণে সহায়তা দিচ্ছে।"
পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত ও লাভজনক এই চারা উৎপাদন পদ্ধতি কুড়িগ্রামের কৃষি অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
।
আসিফ