
বয়স যেন কেবল সংখ্যা।এই কথার এক জীবন্ত প্রমাণ বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান ও জনপ্রিয় নির্মাতা করণ জোহর। পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলেও যাঁদের শরীরের ছাঁট ও ত্বকের দীপ্তি আজও প্রশংসনীয়। এই অনবদ্য ফিটনেসের পেছনে যে একটি বিশেষ খাদ্যাভ্যাস কাজ করছে, তা অনেকেই জানেন না। একে বলা হয় ওয়ান মিল এ ডে (OMAD) ডায়েট, যা বর্তমানে সেলিব্রিটিদের মধ্যে রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
OMAD মূলত ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের একটি চরম সংস্করণ, যেখানে দিনে মাত্র একবার খাবার খাওয়া হয়। সাধারণত এক ঘণ্টার মধ্যে সব ক্যালোরি গ্রহণ করতে হয়, আর বাকি ২৩ ঘণ্টা উপবাসে থাকতে হয়। শুনতে সহজ আর কার্যকর মনে হলেও, চিকিৎসকদের মতে, এটি প্রত্যেকের জন্য উপযুক্ত নয়।
সম্প্রতি এক ইনস্টাগ্রাম লাইভে করণ জোহর জানান, নিজের ওজন কমানোর নাটকীয় যাত্রায় তিনি OMAD ডায়েট গ্রহণ করেছেন। অপরদিকে, ২০২৪ সালের আগস্টে দ্য গার্ডিয়ান-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ খানও জানান, তিনিও একই ধরনের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন, যদিও এটিকে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ নয়, বরং একটি ব্যক্তিগত জীবনধারা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
OMAD কেন জনপ্রিয় হচ্ছে?
ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসাবিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ডা. রাকেশ গুপ্ত জানান, ওজন হ্রাসের সম্ভাবনা এবং ক্যালোরি ঘাটতির কারণে OMAD এখন ব্যাপকভাবে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তাঁর ভাষায়, “দিনে একবার খাবার খাওয়ার সহজত্ব অনেককে এই পদ্ধতির দিকে আকৃষ্ট করছে। খাওয়ার সময়ের মধ্যে খাবারের পছন্দেও থাকে নমনীয়তা। এর মাধ্যমে রক্তে শর্করার পরিমাণ ও প্রদাহ কমানো সম্ভব হতে পারে।”
OMAD-এর সুবিধা কী?
এই ডায়েট পদ্ধতির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো দ্রুত ওজন কমা। একবারেই সব খাবার খেতে হয় বলে খাবারের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি সহজ হয়ে যায়। খাবারের ধরনে নির্দিষ্ট নিষেধ না থাকায় পছন্দের খাবার খাওয়ার স্বাধীনতাও থেকে যায়।
তবে বিপদ কোথায়?
এই পদ্ধতির সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে একাধিক ঝুঁকিও। দীর্ঘদিন OMAD অনুসরণ করলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে, কারণ একবেলার মধ্যে প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করা কঠিন। দীর্ঘসময় উপবাস থাকার ফলে ক্ষুধা, রাগ, মনমেজাজ খারাপ কিংবা অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
ডা. গুপ্ত জানান, “এই দ্রুত ওজন কমানোর ফলে শুধু চর্বি নয়, পেশি হারানোর সম্ভাবনাও তৈরি হয়, যা শারীরিক শক্তির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।” তাছাড়া, এত কঠোর নিয়ম মেনে চলা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, OMAD অনুসরণকারীদের ৬৫ শতাংশই মাঝপথে ছেড়ে দেন এই ডায়েট।
আপনার জন্য কি OMAD উপযুক্ত?
বিশেষজ্ঞরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন, OMAD সবার জন্য নয়। যাঁদের শরীরের বিশেষ পুষ্টি প্রয়োজন বা যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত, তাঁদের জন্য এই ডায়েট বিপজ্জনক হতে পারে। ডা. গুপ্ত পরামর্শ দিয়েছেন, এমন কড়া খাদ্যাভ্যাস শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ধরে রাখতে সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যভ্যাসই সবচেয়ে নিরাপদ এবং টেকসই পথ হতে পারে।
শরীরচর্চা ও ডায়েট নিয়ে সেলিব্রিটিরা যা করছেন, তা দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হন। তবে কোনো ডায়েট শুরু করার আগে নিজের শরীর, বয়স ও প্রয়োজন বুঝে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। শাহরুখ বা করণ যেটা মেনে চলছেন, তা হয়তো আপনার জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়। তাই স্বাস্থ্য সচেতনতার পাশাপাশি সচেতন সিদ্ধান্তই হতে পারে সঠিক পথের দিশা।
সূত্র:https://tinyurl.com/42xa23f8
আফরোজা