
ছবি: লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরো বহির্বিভাগের রোগীকে একাই সেবা দিচ্ছেন মেডিকেল অফিসার ডাঃ মো: ইউসুফ হোসেন।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট ভোলার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রায় ৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসাস্থল। তবে বিগত কয়েক মাস ধরে চিকিৎসকের তীব্র সংকটে বেহাল হয়ে পড়েছে সেবা কার্যক্রম।
সেবা দিতে গিয়ে রীতিমতো চরম বিপাকে পড়ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। এমনই এক চিকিৎসক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির মেডিকেল অফিসার (ইউনানি) ডাঃ মো: ইউসুফ হোসেন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগের রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেন। বিগত দুই মাস ধরে তাকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৩দিন একাই সেবা দিতে হচ্ছে পুরো বহির্বিভাগের সেবাপ্রত্যাশীদের। এসব দিন ডাঃ মো: ইউসুফ হোসেন বহির্বিভাগের ২৫০ থেকে ৩৫০ জন রোগীকে সেবা দেন।
ডাঃ মো: ইউসুফ হোসেন জানান, ‘যেসব দিন আমাকে একা ডিউটি করতে হয় তখন চরম বিপাকে পড়ি। কারণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরো বহির্বিভাগে আমি একাই কোনো দিন ২৫০ জন আবার কোনো দিন ৩৫০ জন রোগীকে সেবা দিতে হয়। তবে সত্যি বলতে, একা এতো রোগীকে ভালোভাবে চিকিৎসা দেওয়া কখনোই সম্ভব না। তবুও এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দরিদ্র-অসহায় রোগীরা আসেন একটু সেবার আশায়। তাই যতটুকু সম্ভব হয় সবাইকেই সাধ্য মতো চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।
গত দুই মাসের মতো সময় ধরে সপ্তাহের অন্তত ৩দিন আমাকে একাই সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সেবা দিতে হচ্ছে। তবে এ সময় কিছু ডায়াগনস্টিকের লোকজন ব্যাপক সমস্যা করেন। একইসঙ্গে হসপিটালের যেসব স্টাফরা রয়েছেন তারাও তেমন ভালোভাবে কাজ করছেন না। এজন্যও রোগীদের সেবায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। তবে মূল সমস্যা চিকিৎসকের সংকট। দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসক পদায়ন না করলে কোনোভাবেই দীর্ঘদিন এভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব না।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩০টি। এর মধ্যে মেডিকেল অফিসার ১৭জন, কনসালট্যান্ট ১১জন, ইউএইচএফপিও এবং আরএমওসহ আরও দুইটি পদ। যার মধ্যে ইউএইচএফপিও এবং আরএমও’র পদে লোকবল রয়েছে। তবে মেডিকেল অফিসার নেই ১৫ জন এবং কনসালট্যান্ট নেই ৯ জন। এই চিকিৎসক সংকটের কারণে কেবল বহির্বিভাগেই নয়, নাজুক অবস্থা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ এবং অন্ত:বিভাগেরও।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডাঃ মো: তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসকের সংখ্যা এতোই কম যে, বহির্বিভাগ সামলাতে গেলে জরুরি বিভাগ খালি থাকে। যার জন্য এ পর্যন্ত কয়েকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসক পদায়নের জন্য চিঠি লিখেছি। তারা কেবল আশ্বাস দিচ্ছেন। আশা করছি কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক পদায়নের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।’
মিরাজ খান