ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বেজির সাথে মানুষের বন্ধুত্ব শুকুর আলীর

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ২৫ মে ২০২৫

বেজির সাথে মানুষের বন্ধুত্ব শুকুর আলীর

ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভার রাজারাম ক্ষেত্রী গ্রামের বাসিন্দা শুকুর আলী। ছোটবেলা থেকেই পশু-পাখির প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা। বনের পাখি হোক কিংবা আহত কোনো প্রাণী, তিনি স্নেহ আর যত্নে তাদের সেবা করেন। আহত পশুদের নিজ খরচে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে আবার তাদের বনে ছেড়ে দেন। প্রাণীদের প্রতি এই ভালোবাসা আজ তার নেশায় পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে শুকুর আলীর সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী একটি বেজি। ছয় মাস আগে তার ছেলে দুলাল মিয়া জঙ্গল থেকে শখ করে একটি বেজির ছানা ধরে আনেন। এরপর শুকুর আলী ছানাটিকে খাঁচায় রেখে আদরে বড় করতে থাকেন। নাম রাখেন ‘রুপালী’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রুপালী হয়ে ওঠে পরিবারেরই একজন।

শুকুর আলী উলিপুর-রাজারহাট সড়কের নারিকেলবাড়ি সন্ন্যাসীতলায় একটি চা-বিস্কুটের দোকান চালান। প্রতিদিন সকালেই রুপালীকে সঙ্গে নিয়ে দোকানে যান। সেখানে খোলা জায়গায় তাকে ছেড়ে দেন। কখনো পাশের ঝোপঝাড়ে ঘুরে বেড়ায়, কখনো বা দোকানের কোণে লুকিয়ে থাকে। ডাক দিলে দৌড়ে এসে শুকুর আলীর কোলে উঠে পড়ে। খেতে পায় দুধ, কলা, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবার।

শুধু শুকুর আলী নয়, তার স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সব সদস্যই রুপালীর স্নেহে মুগ্ধ। স্ত্রী দুলালী বেগম বলেন, “আমরা গরিব মানুষ, নিজেরা না খেয়ে হলেও রুপালীর খাওয়ার ব্যবস্থা করি।”

গ্রামবাসীরাও শুকুর আলীর পশু-পাখি প্রেম দেখে অভিভূত। কেউ বলেন, “শুধু বেজি নয়, আগে শুকুর আলী জঙ্গলের ইঁদুরও পুষেছেন। মুক্ত পাখিদের হাতে খাবার খাইয়ে দিয়েছেন।”

শুকুর আলী বলেন, “মানুষ এখন মানুষের কথা শোনে না। অথচ বনের পশু আমার ডাকে সাড়া দেয়। রুপালী আমার ঘরের পোকামাকড়ও খেয়ে ফেলে। ওকে নিয়ে আমি স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করি। বন্ধু মনে হয়।”

শুকুর আলীর এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা শুধু রুপালীর জন্যই নয়—প্রকৃতি ও প্রাণিকুলের প্রতি তার এক গভীর মমত্ববোধেরই বহিঃপ্রকাশ।

আসিফ

×