ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আজ নাকুগাঁও গণহত্যা দিবস

ভারতীয়দের বাধায় নির্মাণ করা যাচ্ছে না স্মৃতিফলক

নিজস্ব সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর

প্রকাশিত: ১৯:১০, ২৫ মে ২০২৫

ভারতীয়দের বাধায় নির্মাণ করা যাচ্ছে না স্মৃতিফলক

ছবি: সংগৃহীত

আজ ২৫ মে, নাকুগাঁও গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও উপেক্ষা ও অবহেলায় স্মৃতিবিজড়িত নাকুগাঁও বধ্যভূমিটি এখন ভোগাই নদীর ভাঙনের মুখে বিলীন হওয়ার পথে।

নাকুগাঁও স্থলবন্দরের উত্তরে, পাহাড়ি খরস্রোতা ভোগাই নদীর তীরে অবস্থিত এই বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় শতাধিক হিন্দু-মুসলিম শরণার্থীকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা। নিহতদের গণকবর দেওয়া হলেও আজও সেখানে নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিফলক বা স্মৃতিস্তম্ভ।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারক আলী বলেন, “এত বড় একটি বধ্যভূমিতে এখনো কোনো স্মৃতি চিহ্ন নেই—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। নতুন প্রজন্মের জন্য এই ইতিহাস সংরক্ষণ জরুরি।” আরেক মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল জানান, “সেদিন ভোরে ভোগাই নদী পার হয়ে ভারত যাওয়ার সময় হানাদার বাহিনী পেছন থেকে ব্রাশফায়ার চালায়। অনেকে নদীতে লাশ হয়ে ভেসে যান। ঠিক কতজন শহীদ হয়েছিলেন, তা আজও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম হিরো বলেন, “বহুবার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ভারতের কিল্লাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের বাধার মুখে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।”

স্থানীয়রা জানান, ভারতীয় অংশে শহীদ বিএসএফ সদস্যদের স্মরণে তীর সংরক্ষণ বাঁধ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের অংশে এখনো কোনো উদ্যোগ নেই। বর্তমানে বধ্যভূমির জায়গায় ঝোপঝাড়, বাঁশঝাড় ও স্থানীয়দের শৌচাগার গড়ে উঠেছে।

নাকুগাঁওয়ের স্থানীয় বাসিন্দা শ্রী রাজকুমার বলেন, “আমি নিজ চোখে দেখেছি পাকিস্তানি বাহিনী কীভাবে এখানে মানুষ হত্যা করে গণকবর দেয়। ভারতীয় অংশে স্মৃতিস্তম্ভ থাকলেও আমাদের দেশে আজও কিছু হয়নি।”

এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, “বধ্যভূমির অংশটি নো ম্যানস ল্যান্ডে হওয়ায় আন্তর্জাতিক আইনে স্থাপনা নির্মাণে জটিলতা রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে স্মৃতিফলক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর জোর দাবি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের স্বার্থে নাকুগাঁও বধ্যভূমিতে অবিলম্বে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে হবে।

আসিফ

×