
ছবি : জনকণ্ঠ
মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার। পুষ্টি ও ঔষধিগুণ থাকায় ইতোমধ্যেই এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মাঝে মাশরুম চাষে বেশি আগ্রহ বাড়ছে।
বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করে ইতিমধ্যে তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তুলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের করুয়াতলী গ্রামের মোহাম্মদ ফয়জুল গনী নামে এলএলবি অধ্যয়নরত এক যুবক। তিনি গড়ে তুলেছেন বারী মাশরুম কর্নার নামে বাণিজ্যিক খামার। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন ৬/৭ জন মানুষের।
সরেজমিনে মোহাম্মদ ফয়জুল গনীর খামারে গিয়ে দেখা যায় চারদিকে শান্ত নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ। খামার বাড়ির আঙিনায় বিভিন্ন ফলফলাদির গাছ, রয়েছে ছোট একটা ঝিল, ঝিলের টলমলে পরিষ্কার পানিতে হাস ভেসে বেড়াচ্ছে। তার পাশে সুন্দর পেঁপে বাগান। আর এক কোণায় মাশরুমের ঘর। ঘরে সাজিয়েছেন মাশরুমের র্যাক। তাকে তাকে সাজানো মাশরুমের প্যাকেট। প্যাকেট ভেদ করে বের হওয়া মাশরুমগুলো দেখতে বেশ চমৎকার।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে তার এই পথচলা। মূলত নিজের ইচ্ছাশক্তি আর কৃষি অফিসের উৎসাহে মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেন তিনি। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে তিনি মাশরুম চাষ শুরু করেছেন।
স্থানীয় যুবক মো. সাদমান বলেন, ফয়জুল গনী ভাইয়ের মাশরুম চাষ করা দেখে আমরা ভাবতাম ব্যাঙের ছাতার মতো কী চাষ করে। পরে বুঝলাম অনেক পুষ্টিকর খাবার মাশরুম এটি। আমার বাড়িতে জায়গা আছে। আমিও মাশরুম চাষ করব। এ নিয়ে ফয়জুল গনী ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেব।
মোহাম্মদ ফয়জুল গনী বলেন, আমার বাবা, মা, ভাই, বোন আমেরিকায় বসবাস করেন। তাদের কাছ থেকে মাশরুমের পুষ্টিগুণের কথা শুনে আমি মাশরুম চাষের পরিকল্পনা করি। পরে গেল ২০২৪ সালের শেষের দিকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ঢাকা মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণে পাঠায়। প্রশিক্ষণ শেষে মাশরুম চাষ শুরু করার যাবতীয় উপকরণ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করেছেন। বর্তমানে আমার প্রায় ১ হাজার স্পন আছে, যা থেকে প্রতিদিন ৩/৪ কেজি করে মাশরুম তুলে বাজারজাত করি। প্রতি কেজি পাইকারি দরে বিক্রি হয় তিনশ টাকা। আমি আশা করছি আগামী শীতে প্রতিদিন ১০/১২ কেজি মাশরুম বাজারজাত করতে পারব। এলাকায় বেশ সাড়া পাচ্ছি। দিনদিন মাশরুমের চাহিদাও বাড়ছে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. তানিয়া তাবাসসুম বলেন, মোহাম্মদ ফয়জুল গনী একজন ভালো ও তরুণ উদ্যোক্তা। মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্পের আওতায় মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট সোবহানবাগ, সাভার এ তিনি মাশরুম চাষের ওপর উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। মাশরুমের চাষ পদ্ধতি তিনি হাতে-কলমে শিখেছেন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি পিডিএ মিডিয়া প্রস্তুত, পিওর কালচার তৈরি, মাদার কালচার ও বাণিজ্যিক স্পন তৈরি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেন। কৃষি কর্মকর্তা ফয়জুল গনীর মাঝে মাশরুম চাষে প্রচুর সম্ভাবনা দেখছেন। মাশরুম প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত প্রদর্শনীর উপকরণ হিসেবে তাকে উপজেলা কৃষি অফিস কর্তৃক একটি চাষ ঘর, একটি বীজ ঘর স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে এবং ইনকুলেশন চেম্বার, ১২টি র্যাক, ভ্যান গাড়িসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুষ্টিতে সমৃদ্ধ হওয়ায় মাশরুমকে গরিবের মাংস বলেন অনেক বিশেষজ্ঞ। ফসলটি বাংলাদেশে উদীয়মান হওয়ায় এখানে বিনিয়োগ সহজ। এতে সাফল্যের সম্ভাবনাও বেশি।
সা/ই