
দৈনিক জনকণ্ঠ
রাজবাড়ীর মাটি যেন এখন শুধুই জামের সুবাসে ভরপুর। প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখান থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকারও কম রপ্তানি হচ্ছে। যা এই মৌসুমি ফলটিকে এনে দিয়েছে ‘কালো সোনা’র খ্যাতি।
বিশেষ করে জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট হয়ে প্রতিদিনই রপ্তানি হচ্ছে প্রায় ২ কোটি টাকার জাম। তবে আশ্চর্যের বিষয়, এই বিপুল পরিমাণ ব্যবসার পেছনে নেই কোনো বাণিজ্যিক চাষাবাদ। জেলার সাধারণ মানুষের বাড়ির আঙিনায় রোপিত জামগাছ থেকেই আসছে এই বিশাল পরিমাণ ফল।
ক্ষণস্থায়ী রাজত্ব, টনকে টন জামের মৌসুম মাত্র ১৫-২০ দিনের। এই স্বল্প সময়েই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার জাম। বাজারে কেজি প্রতি দাম ১৮০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা পর্যন্ত উঠানামা করছে। গড় দাম ধরা হলে প্রতিমণ প্রায় ৮ হাজার টাকা, অর্থাৎ প্রতি টন ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গোয়ালন্দ উপজেলার শুধু দৌলতদিয়া ঘাট থেকে প্রতিদিনই রপ্তানি হচ্ছে অন্তত ৫ টন জাম, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। জেলার অন্যান্য অঞ্চল মিলে রপ্তানির পরিমাণ ছাড়িয়ে যাচ্ছে ২৫ টন, যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫ কোটি টাকা।
জামের এমন আকস্মিক চাহিদা দেখে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
তাদের মতে, যদি বাণিজ্যিকভাবে জাম চাষ শুরু করা যায়, তবে রাজবাড়ী জেলার কৃষি ও অর্থনীতি উভয়ের চেহারা পাল্টে যেতে পারে।যদিও মাত্র ১৫ দিনের মৌসুম, তবুও জাম এখন রাজবাড়ীর অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ এক নাম। নীতিগত সহায়তা, চাষাবাদে উৎসাহ এবং বিপণনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে এই মৌসুমি ফলই হয়ে উঠতে পারে স্থায়ী আয়ের উৎস।
মো. মতিয়ার মোল্লা ও তার ছেলে রাব্বী মোল্লা বলেন,“বাড়ির আঙিনার কয়েকটা গাছ থেকেই প্রতিদিন ২০-৩০ হাজার টাকার জাম বিক্রি করছি। ভাবতেও পারিনি এমন আয় হতে পারে! সরকার যদি পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাহলে আমরা বাগান করে জাম উৎপাদন করতে পারি।”
দৌলতদিয়া ঘাটে জাম ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি সারা বছর ফলের ব্যবসা করি। তবে ১৫ দিনের মৌসুমি ফলও প্রতিবছর ব্যবসা করি। তিনি বলেন, এবার শুরু থেকে প্রতি কেজি ২শত থেকে ২৫০টাকা পর্যরÍ বিক্রি হয়েছে। এখনও হচ্ছে। এই জাম শুধু ঢাকা নয় দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় রাজবাড়ীতে কেউ বাণিজ্যিক ভাবে জাম চাষ করে না।
ফল ব্যবায়ী আফতার প্রামানিক বলেন, রাজবাড়ী জেলার মাটি অনেক উর্ব্বরতা রয়েছে। যে কোন ফলন ভালো হয়। যে কারণে বাণিজ্যিকভাবে জাম কেউ চাষ না করলেও বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানোর জাম গাছের জাম রপ্তানি করা সম্ভব হয়।
এময় একাধিক বিক্রেতা বলেন, গাছের জামের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে যায়। গাছ থেকে জাম পড়া এত সহজ না। সুতরাং সরকার জাম গাছ বাণিজ্যিক ভাবে চা করার ভ্যাবা নিলে অবশ্যই জেলায় অনেকে জাম চাষ করতে আগ্রহী হবে।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানায়, জমি উপযোগী হলে জাম চাষে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হবে। বর্তমানে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা ও বাজারমূল্য বিবেচনায় জাম হতে পারে রাজবাড়ীর সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য।
হ্যাপী