ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

"চিকিৎসা নয়, চাঁদা আগে" পটুয়াখালী মেডিকেলে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট

মো. মোখলেছুর রহমান, নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১২:৫২, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ১৩:২৮, ২৫ মে ২০২৫

দৈনিক জনকণ্ঠ

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা রোগীকে করতে হচ্ছে চাঁদাবাজি। কলেজ কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে তাদের অনুমতি ব্যতীত রেখে কলেজ ক্যাম্পাসে খুলে বসেছে অ্যাম্বুলেন্স সমিতি। এদের অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোনো এ্যাম্বুলেন্সে রোগী নেয়া যাবে না।

তাদের এই লক্কড়-ঝক্কড় অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়াও আবার দিতে হয় দ্বিগুণ। রোগীর স্বজনরা ক্যাম্পাসের লক্কড়-ঝক্কড় অ্যাম্বুলেন্সে আস্থা না থাকায় বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স আনলে তাতে দেয়া হয় বাধা। দিতে হয় নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা।

এ অবস্থায় পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে আসা সকল রোগীরা আছেন মহা বিপদে। আগে এখান থেকে নিয়মতান্ত্রিক ভাড়ায় এ সব এ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিতে পারলেও এখন সমিতি হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই চক্রের নেতৃত্ব দেন পটুয়াখালী অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি শাহেদ মৃধা ও সাধারণ সম্পাদক শাকিল মৃধা।

ভুক্তভোগী ও হাসপাতাল সূত্রে জানাজায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিক আব্দুস সালাম আরিফের বাবা আব্দুল কাদের মিয়া হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতালে ভর্তি হন। শুক্রবার দুপুরে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় স্থানান্তর করলে

আরিফ ঢাকাগামী একটি অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে নিয়ে আসেন। তবে অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না সাজিদ নামের এক অ্যাম্বুলেন্স চালক। সাজিদের দাবি, মালিক সমিতির এ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিতে হবে। অন্যথায় ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। না হলে রোগী নিতে দেওয়া হবে না। এদিকে এ ঘটনার পর হাসপাতাল চত্বরে সাংবাদিক আরিফের কান্নার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যা নিয়ে জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা দেয়া অত্যন্ত জরুরি। সেখানে সাংবাদিক আরিফের বাবাকে নেয়ার জন্য এ্যাম্বুলেন্সটিকে আধাঘণ্টা আটকে রাখে। সাংবাদিকের বাবা জানার পরও তাদের কোন পরোয়াই নেই।  

এ ব্যাপারে সাংবাদিক আব্দুস সালাম আরিফ জানান, ‘আমার বাবা মুমূর্ষু অবস্থায়, আমি ৩০ মিনিট ধারে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাসপাতালে ঢুকতে পারতেছি না। আমি যেখানে ৭ হাজার টাকায় এসি অ্যাম্বুলেন্স পাচ্ছি, সেখানেওদের ফিটনেস নেই, সমিতির অ্যাম্বুলেন্স নাকি নেওয়া লাগবে ১২ হাজার টাকায়।

আমি আমার সাংবাদিক পরিচয় দিলাম। শাহেদ নামের সভাপতি বলেন আপনি যে-ই হন আমাদেরটাই নেওয়া লাগবে। তিনি নাকি বিএনপির নেতা। এভাবে সিন্ডিকেট করে রোগীদের হয়রানি করছে। কোন বাংলাদেশে আছি? কার কাছে বিচার দেব?’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা জানান, সমিতির নিয়ম অনুযায়ী চলতে হয়। সিরিয়ালে থেকে ট্রিপ বেশি লাগে। এবং প্রতি ট্রিপে সমিতিকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়। না হলে হাসপাতালে ট্রিপ দিতে দেয় না।’

অভিযোগ অস্বীকার করে অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাকিল মৃধা বলেন, ‘আমরা মানুষকে সেবা দেই। কিন্তু আমরা এমনটি কখনো করি না। আরিফের সঙ্গে কালকে যেটা ঘটেছে, আমরা দেখে মর্মাহত হয়েছি। সভাপতিকে নিয়ে বসেছিলাম, তিনি নাকি এমনটি বলেননি। যে ছেলেটা চাঁদা চেয়েছে, ও ড্রাইভার। ৩ মাস আগেই ওকে বের করে দিয়েছি আমরা।’

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা জানান, ‘হাসপাতাল কম্পাউন্ডের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতি বিনা অনুমতিতে পার্কিং দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রোগীদের অভিযোগ বিস্তর। ইতিমধ্যে হাসপাতালের মধ্যে কোনো ধরনের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স না রাখার জন্য চিঠি দিয়েছি। সব শেষে তারা কম্পাউন্ড থেকে অ্যাম্বুলেন্স সরিয়ে নিয়েছে বলে জনা গেছে। 

জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, ‘এ ধরনের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
 

হ্যাপী

×