
ছবি: জনকন্ঠ
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল জাফলং। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায়, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই অপূর্ব স্থানটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ।
সিলেট শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জাফলংয়ে পাহাড় আর স্বচ্ছ নদীর অসাধারণ সম্মিলন পর্যটকদের মোহিত করে। এখানকার প্রধান আকর্ষণ পিয়াইন নদী, যা ভারতের ডাউকি থেকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
স্বচ্ছ পানির এই নদীতে নৌকা ভ্রমণ পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় অভিজ্ঞতা। জাফলংয়ের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এখান থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উঁচু পাহাড়গুলো চোখে পড়ে। বর্ষাকালে এসব পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার জলরাশি নদী হয়ে প্রবাহিত হয়ে যায়। সেই দৃশ্য অসাধারণ ও মনোমুগ্ধকর।
এছাড়া ডাউকি নদীর উপর ঝুলন্ত সেতু দর্শনার্থীদের বাড়তি আকর্ষণ যোগ করে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
এক সময় জাফলং ছিল খাসিয়া-জৈন্তা রাজার রাজত্বাধীন বনভূমি। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর বহু বছর এই এলাকা পতিত ছিল। পরবর্তীতে পাথরের জন্য খ্যাতি লাভ করে, এবং পাথর ব্যবসার মাধ্যমে এখানে গড়ে ওঠে নতুন জনবসতি।
জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ
জাফলং অঞ্চলে সুপারি, নারিকেল গাছে বসবাসকারী বাদুড়ের দেখা মেলে, যদিও বৃক্ষনিধনের কারণে এখন সেই সংখ্যায় হ্রাস ঘটেছে। এখানকার নদীতে পাওয়া যায় কঠিন শিলার নুড়ি এবং বর্ষায় পাহাড় থেকে ভেসে আসে বড় বড় পাথর।
ভ্রমণের সেরা সময়
জাফলং ভ্রমণের জন্য বর্ষাকালকে আদর্শ সময় বলা হয়। তখন পাহাড়ি ঝর্ণা ও নদীর স্রোত থাকে প্রাণবন্ত। শীতকালেও এখানকার মেঘে ঢাকা পাহাড় ও শান্ত পরিবেশ পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
যাতায়াত ব্যবস্থা
ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়া যায় বাস, ট্রেন ও বিমানে। বাস ভাড়া ৬৫০ থেকে ২০০০ টাকা, ট্রেন ভাড়া ৩৫০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং বিমানের টিকিট ৩৫০০ থেকে ১০০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। সিলেট শহর থেকে জাফলং যেতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা। লোকাল বাস কিংবা রিজার্ভ গাড়িতে করে আপনি যেতে পারেন।
সিলেট শহরের জিন্দাবাজারে পানসী, পাঁচ ভাই ও পালকি রেস্টুরেন্টের খাবার ভীষণ জনপ্রিয়। থাকার জন্য সিলেট শহরের হোটেলগুলোই উপযুক্ত যেমন দরগা গেট ও কদমতলী এলাকার আবাসিক হোটেল। তবে জাফলংয়ে থাকতে চাইলে জাফলং ইর বা জাফলং গ্রিন রিসোর্টে থাকতে পারেন।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম রত্ন জাফলং, যেখানে পাহাড়, নদী, ঝর্ণা ও ইতিহাসের অপূর্ব সম্মিলন। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা একান্তে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে চাইলে জাফলং হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য।
মুমু