
পরিবেশবান্ধব ও সহজ নৌযান তালের তৈরি ডোঙা। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তালের ডোঙা। নতুন প্রজন্মের কাছে নামটি অদ্ভুত মনে হতে পারে। তবে তালের ডোঙা অর্থাৎ তালগাছ থেকে তৈরি ছোট নৌকা এক সময় বেশ পরিচিত ছিল।
‘ডোঙা’ শব্দের মূল উৎপত্তি হয়েছে ‘ডিঙি’ থেকে। ‘ডিঙি’ অর্থ ছোট। তালের ডোঙা মূলত নির্মাণ করা হয় তাল গাছ থেকে। ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও বেশিরভাগ বিল ও হাওর এলাকায় প্রচুর তালের ডোঙা দেখা যেত, কিন্তু কালের স্রোতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে আজ বিলুপ্তির পথে।
এক সময় এ অঞ্চলে প্রচুর তালের ডোঙার ব্যবহার ছিল। এটি মূলত মাছ ধরা, শাপলা তোলা, শামুক সংগ্রহ অথবা স্রোতহীন কোনো বিল পার হওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সাঈদুজ্জামান বলেন, "বর্তমান যুগের সন্তানরা তো এখন তালের ডোঙা কি সেটা চিনে না। তবে প্রবীণরা বলেন, ‘এখনও বর্ষা মৌসুমে আমরা তালের ডোঙ্গার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করি’।”
প্রবীণরা বলেন, তালের ডোঙা স্রোতের মধ্যে চলতে পারে না। একসময় ছোটখাটো কাজ করার জন্য তালের ডোঙা প্রসিদ্ধ ছিল। বিনোদনের জন্য নদী ও খাল বিল এলাকায় আয়োজন করা হতো ‘ডোঙ্গার বাইচ’। সর্বোচ্চ দুজন মানুষ এক সঙ্গে ডোঙ্গায় চলাচল করতে পারত। এর বেশি হলে ডুবে যেত। বর্ষা মৌসুমে চলাচলের জন্য তালের ডোঙা ব্যবহৃত হতো।
পরে কথা হয় মৎস্যজীবী কুদ্দুস মিয়ার সঙ্গে। তিনি প্রায় ১০ বছর আগে ডোঙা তৈরি করে সেই ডোঙা দিয়ে সারা বছর খাল থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এলাকার মানুষ তার কাছে ডোঙা তৈরির জন্য বায়না দিতেন।
তিনি জানান, তাল গাছের আধিক্যের কারণে এ এলাকায় ডোঙা তৈরি সহজ ছিল। অনেকে ডোঙা তৈরি ও সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তালের ডোঙা নির্মাতারা হারিয়ে গেছেন, সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছে ডোঙাও। বর্তমানে দেশে ডোঙা তৈরি হয় না বললেই চলে।
পরিবেশবান্ধব ও সহজ নৌযান তালের ডোঙা। এ ধরনের নৌযান টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
সজিব