
ছবি: জনকন্ঠ
কুড়িগ্রামের চিলমারী ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতু, অবশেষে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। সেতুটির নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন হলেও একটি সংযোগ সেতুর অসমাপ্ত কাজের কারণে উদ্বোধন বিলম্বিত হচ্ছে।
সৌদি সরকারের অর্থায়নে প্রায় ৮৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ১,৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুটি। চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন সেতুটির নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে।
সেতুর উভয় পাশে ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার নদী শাসন কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সেতুর মূল কাঠামোর কাজ প্রায় শেষ হলেও, একটি ৯৬ মিটার দীর্ঘ আর্চ ব্রিজের অসমাপ্ত কাজ উদ্বোধনে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামের নিপা এন্টারপ্রাইজ ২০২১ সালের নভেম্বরে এই আর্চ ব্রিজের নির্মাণের কার্যাদেশ পায়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নির্মাণকাজের গাফিলতির কারণে কাজ থমকে যায়। এলজিইডির কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নকশা অনুযায়ী কাজ না করে স্টেজিং সাপোর্ট সরিয়ে ফেলায় ব্রিজের কিছু অংশে ত্রুটি দেখা দেয়।
সেতুর মূল কাঠামোর কাজ প্রায় শেষ হওয়ায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছে ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে সেতুটি উদ্বোধন করা যাবে।
সেতুটি চালু হলে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে, যাতায়াত সহজ ও সময়সাশ্রয়ী হবে। কৃষিজ পণ্য দ্রুত বাজারজাত করা সম্ভব হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। এর মাধ্যমে দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সামাজিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা সেতুটির উদ্বোধনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তারা মনে করেন, সেতুটি চালু হলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে, কৃষিপণ্য পরিবহন সহজ হবে, এবং চিকিৎসা ও শিক্ষাসেবা গ্রহণে সুবিধা হবে।
চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতুটি কেবল একটি অবকাঠামো নয়, এটি উত্তরাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার প্রতীক। সেতুটির উদ্বোধন হলে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তবে, নির্মাণকাজের গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে যে বিলম্ব হয়েছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি ।
মুমু